ভাতা বৃদ্ধির দাবি না মানা হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে মেডিকেলে উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের সংগঠন প্রাইভেট পোস্টগ্রাজুয়েট ট্রেইনি ডক্টরস এসোসিয়েশন। আগামী ১২ জুন পর্যন্ত এ লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা এ দাবি জানান।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী ডা. মো. হাবিবুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডা. মেজর (অব) আব্দুল ওহাব মিনার।
এতে আরও অংশ নেন দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে উচ্চতর কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকরা।
এ সময় ডা. হাবিবুর রহমান সোহাগ বলেন, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি নিতে সময় লাগে পাঁচ বছর। আমাদের এখানে বেসরকারি প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা দেওয়া হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। এর বাইরে বোনাসসহ অন্য কোনো সুবিধা নেই। নেই কোনো ইনক্রিমেন্ট। অথচ মেডিকেলের বেশিরভাগ সেবাই আমরা দিচ্ছি।
তার ভাষ্যমতে, মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য নিয়োজিত আমরা। কিন্তু রাষ্ট্র তো আমাদের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দেয়নি। নিজে চিকিৎসক হওয়ার পরও বাবা-মার চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি না। স্ত্রী-সন্তানের অধিকার আদায় করতে পারি না। এ অবস্থায় আমরা কীভাবে মানুষের সেবা দিই?
আগামী ১২ জুনের মধ্যে ন্যায্য দাবি মেনে না নিলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় পাশ্ববর্তী দেশে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সে অধ্যয়নরত চিকিৎসকদের ভাতার পরিমাণ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ভারতে ৬৭ হাজার ৬৮৩ টাকা, পাকিস্তানে ৩৮ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হয়। আর আমাদের ভাতা ২০ হাজার টাকা, যা অমানবিক।
বক্তারা বলেন, আমরা যদি পড়াশোনা ছেড়ে মাঠে মাঠে দাবি আদায়ে ব্যস্ত থাকি, তাহলে রোগীরা বঞ্চিত হবেন। আমরা চাই, দেশের চিকিৎসা খাত আরও এগিয়ে যাক। আমাদের পিছিয়ে রেখে তা সম্ভব না।
তারা বলেন, সবাই আশার বাণী শুনান। এ ক্ষেত্রে কেউ কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসক জাবির বলেন, আমাদের এখন অসুস্থ রোগীদের পাশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু নিরুপায় হয়ে নামতে হয়েছে মৌলিক অধিকার আদায়ে, যা দুঃখজনক। আমাদের যে ভাতা দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে বর্তমান এই বাজারে জীবন নির্বাহ করা অসম্ভব। একজন চিকিৎসক অর্থনৈতিক সংকটে থাকলে পরিপূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব না।
পোস্ট গ্র্যাজুয়েট আরেক প্রশিক্ষণার্থী ডা. তুহিন বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের অভাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খানিকটা দুর্বল পর্যায়ে আছে। বিশেষজ্ঞ হওয়ার জন্য আমরা যারা পড়াশোনা করছি, তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে আজ দাবি আদায়ে নামছি। ভারত, পাকিস্তান থেকে আমাদের দেশে ভাতা অনেক কম। আমরা রোগীদের সময় দিতে পারছি না, কারণ আমাদের অর্থ নিয়ে চিন্তা করতে হয়। আমাদের ভাতা ২০ হাজার অথচ আমাদের খরচ এর থেকে কয়েকগুণ বেশি। আমাদের এক একটা ইন্সট্রুমেন্ট কিনতে গেলে ৩০-৪০ হাজার টাকা লেগে যায়।
ডা. মাসুদুল ইসলাম নামে আরেক পোস্ট গ্র্যাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী বলেন, এরপর হয় তো আসতেও পারবো না। কারণ টাকা না থাকলে কীভাবে আসবো? সামনে ঈদ, অর্থাভাবে কোরবানির দেওয়া সম্ভব হবে না। আমার ছোট্ট বাচ্চাকে একটা জামা কিনে দিতে পারি না। এ অবস্থায় কেমনে আমরা রোগীদের সেবা দিবো!
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মেজর (অব) আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, চিকিৎসকদের মানসিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না থাকলে সেবা দেয়া সম্ভব না। পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকদের ভাতা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা জরুরি। কিন্তু এ দাবির কথা কেউ শুনছেন না! এই চিকিৎসকরা যে কত করুণ অবস্থায় আছে, তা বলে বুঝানো যাবে না। বাজেট ফেরত যাচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসকরা পাচ্ছে না। তারা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা দিতে হলে চিকিৎসকের সুস্থ থাকতে হবে।