আব্দুল্লাহ আল আলীম, দেবিদ্বার প্রতিনিধি: কুমিল্লার দেবিদ্বারে পাওনা টাকার দাবিতে মৃত ব্যক্তির জানাজায় বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিদেশ ফেরত ৫ যুবক এ সময় তাদের ক্ষতিপুরণ দাবিতে লাশ দাফনে বাধা দিলে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বেলা ২টায় কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ধামতী ইউনিয়নের দক্ষিণখার গ্রামের জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে।
ধামতী ইউপি মেম্বার আবু ইউছুফ জানান, ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সাগর কাতার প্রবাসী ছিলেন। সাগরের ছোট ভাই হৃদয় আহমেদ বেশ কয়েকবছর পূর্বে কাতার প্রবাসী হন। ৪ বছর আগে সে দেশে এসে আদম ব্যবসা শুরু করেন। নিজ এলাকার ছাড়াও সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০ জন লোক বিদেশে পাঠাবার কথা বলে টাকা নেন, অনেককে বিদেশ পাঠান, অনেককে পাঠাতে পারেননি। সাগরদের পরিবার দির্ঘদিন ঢাকা যাত্রাবাড়ি এলাকায় বসবাস করেন। এরই মধ্যে পাওনাদারদের চাপে পড়ে গ্রামের বাড়িটি ৩৬ লক্ষ টাকা বিক্রি করে দেন।’
তিনি জানান, ‘সাগরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আবু তাহের(৬৫) মারা গেলে তাকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করতে নিয়ে আসেন। পাওনাদাররা সংবাদ পেয়ে পাওনা টাকার দাবিতে জানাযায় বাধা দেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে।’
মৃতঃ আবু তাহের মিয়ার পুত্র সাগর জানান, ‘ঋণের চাঁপে বাড়ি বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আজ আমার বাবার জানাযার সময় প্রতিবেশী বাবুল মিয়া, তার পুত্র কাতার ফেরত ফারুক ও হেলাল এবং তাদের আত্মীয় কবির এসে বাবার জানাযায় বাধা দেয়। তারা এ সময় টাকার দাবিতে বাবার লাশ খাটিয়া থেকে ফেলে দেন। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাকে, আমার মা রফিয়া খাতুন এবং ছোট ভাই আকাশ, ফুফাতো ভাই আরাফাতসহ কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করে। আমরা ওদের থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে ফ্রি ভিসায় কাতার পাঠাই। আমার ভাই নিজ খরচে ওদের ৬/৭ মাস খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা করে দেন। ওরা কনস্ট্রাকশন ফার্মে কাজ করতে পারবে না বলে ৪ মাস পূর্বে দেশে চলে আসেন। এখানে আমাদের টাকার জন্য চাপ দেয়, হত্যার হুমকী দেয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় ডায়েরী করতে হয়েছে। ওরা টাকা দাবী করে জানাযায় বাধা দেয়।’
অভিযুক্ত কাতার ফেরত ফারুক জানায়, আমাদের বিদেশ নিয়ে কোন কাজ দেয়নি, আকামাও দেয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে ৫ জন দেশে ফিরে এসে সাগরকে ভিসার টাকার জন্য চাপ দেই। এলাকায় একাধিক সালিসও হয়, ফয়সালার কথা বলে গোপনে বাড়ি বিক্রি করে চলে যায়।’
ইমাম আবু ইউছুফ পাওনাদার কেউ থাকলে সাগরদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন, এসময় আমরা পওনাদার ৫ জন উপস্থিত হয়ে জানাযার পূর্বে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা করে দাবি করি। এ সময় সাগর ও তার স্বজনরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আমি, আমার ভাই হেলাল, বাবা বাবুল মিয়াকে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার বাবার একটি দাত পড়ে যায়।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, দক্ষিণখাড় গ্রামের সাগর নামে এক যুবক দেশে এসে আদম ব্যবসা শুরু করেন। বেশ কিছু লোকজন থেকে টাকা নিয়ে কাতার পাঠান। ওদের কয়েকজন ভিসা এবং আকামা সমস্যায় দেশে ফিরে আসেন। এরইমধ্যে ঋণের চাপে গ্রামের বাড়ি বিক্রি করে ঢাকায় চলে যান। সাগরের বাবা (অবঃ) পুলিশ সদস্য আবু তাহের(৬০) মারা যাওয়ার কারণে জানাযা দিতে আজ গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে আসে। সংবাদ পেয়ে পাওনাদাররা জানাযার আগে পাওনা টাকা পরিশোধের দাবি জানায়, এ নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরে একজন আমেরিকা প্রবাসী অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্য উভয় পক্ষকে থামিয়ে জানাযা সম্পন্ন করেন।