আব্দুল্লাহ আল আলীম, দেবিদ্বার প্রতিনিধি:
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হওয়া ৩ মৃতদেহের ২ জনই বাংলাদেশি। গত রোববার (৩ মার্চ) রাতে ১ ০টার দিকে কাজাং এলাকার কেটিএম পুনকাক উতামা জেড হিল ট্র্যাকে ঘটনাটি ঘটে।
নিহত বাংলাদেশী ২ যুবকের নাম কামাল হোসাইন(৩২) এবং দুলাল(৩৩)। অপরজন মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক(৪০) বলে জানা যায়। তারা বাংলাদেশের কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ ইউনিয়নের এলাহাবাদ (উটখাড়া) গ্রামের পূর্বপাড়ার লিটন মেম্বারের বাড়ির মো. শহীদের ছেলে কামাল হোসাইন(২২) এবং প্রতিবেশী মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে দুলাল (৩৩)।
তারা দু’জনেই ১ বছর ৪ মাস পূর্বে কাজের উদ্দেশ্যে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় যান। ওখানে তারা কাজ না পেয়ে কিছুদিন পালিয়ে থেকে একটি ওয়ার্কশপে গোপনে কাজ শুরু করেন। ঘটনার দিন রাতে কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের হাতে ওরা ৩জন নিহত হন। ট্রেনে কাটা পরে তাদের মৃত্যুর সংবাদে নিহতদের গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের শোকের মাতম চলছে।
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি-আর্তনাদের ভারি হয়ে থাকে বাড়ির পরিবেশ।
নিহত কামাল হোসেনের বড় ভাই সেলিম জানান, ‘গত সোমবার রাতে ট্রেনে কাটা পরে ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদটি পান। পরে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত আত্মীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন, কারখানায় কাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে একদল তামিল ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে তার ভাইসহ ৩ জন। ওরা তাদের হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে রাখা অবস্থায় পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করেন।’
তিনি বলেন, ‘ট্রেনে কাটা পরে মারা যায়নি। কারণ মালয়েশিয়ায় মেট্রোরেলসহ সব ধরনের রেললাইনের দুই পাশেই ইস্পাতের শক্ত বেড়া দেয়া থাকে। যাতে রেললাইনে কোনো মানুষ ও জীব জন্তু প্রবেশ করতে পারে না। আর নিহতদের মরদেহ পাওয়া গেছে রেল লাইনের অনেক দুরে জঙ্গল থেকে।’
এ বিষয়ে কথা হয় মালয়েশিয়ায় নিহত কামাল হোসাইনের পিতা মো. শহিদ মিয়ার সাথে। তিনি জানান, “আমার ছেলের সাথে সর্বশেষ কথা হয় গত বুধবার রাতে, সে জানায় ‘দেড় মাস ধরে তেমন কোন কাজ পাইনি। তবে আব্বা চিন্তা করবেন না, কয়েক দিনের মধ্যে কিছু টাকা পাঠাব।’ আমার ছেলেকে বিদেশ পাঠাতে ধার দেনা সুদে ঋণ করে ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় তাকে মালয়েশিয়ায় পাঠাই, ছেলের দেয়া কিছু টাকা এবং একটি গরু বিক্রি করে কিছু দেনা শোধ করেছি। এখনো সুদের ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণে আছি।”
নিহত কামালের মা মোসা. আনোয়রা বেগম আর্তনাদ করে বলেন, ‘আমার কামাল মানিক গত বুধবার রাতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল, বিদ্যুৎ না থাকায় চেহারাটা ভালো করে দেখতে পারি নাই, আমার ছেলে শুকিয়ে গেছে। দু’বছর পর দেশে আসলে বিয়ে করাব ভাবছিলাম। আমি আমার মানিকের জন্য বৌমাও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিলাম। আমার মানিকরে তুই কি করলি? অঝোরে কাঁদছেন আর বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন।’
অপরদিকে নিহত দুলালের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। হতদরিদ্র দুলাল স্ত্রী, মা ও ২ শিশু সন্তান রেখে ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছিলেন। এক শতাংশ জমির উপর থাকার দোচালা একটি ঘর ছাড়া আর কোন সম্পদ রেখে যাননি বলে জানান তার স্বজনেরা। বিদেশ যাওয়ার টাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার-দেনা ও সুদে নিলেও ঋণের টাকা রেখেই তার মৃত্যু হল।
নিহত দুলালের স্ত্রী আকলিমা আক্তার কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরির সুবাদে শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম এবং দুই কন্যা নামিয়া(৪) ও সামিয়া(২)কে নিয়ে কুমিল্লা শহরেই থাকেন। তাই তাদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি।
তবে বাড়িতে থাকা দুলাল মিয়ার ভাবী হাফেজা বেগম ভাতিজি সুমি আক্তার জানান, তারা দুলালের মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। লাশ দেশে আনার জন্য তারা স্থানীয় নেতৃবৃন্দর সহযোগিতায় কাজ করছেন।
নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন স্থানীয় সাংসদ এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো.আবুল কালাম আজাদ।