চট্টগ্রামের মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পক্ষে আদালতে আইনি লড়াই করছেন সিনিয়র আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী। বাবুলকে খুনের মামলা থেকে বাঁচাতে আদালতে তদন্ত ও সাক্ষ্যের ফাঁকফোকর তুলে ধরছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের এই আইনজীবী।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরীও বাবুল আক্তারের আইনজীবী হিসেবে সাক্ষীদের জেরা করছেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। বাবুলকে নির্দোষ প্রমাণে তারা আদালতে যুক্তিতর্কের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবুলের পক্ষে আরও আছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ।
তিনি বিএনপি সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও মিতু খুনের মামলার সাক্ষীদের জেরায় অংশ নিচ্ছেন। ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় ঝানু এ তিন সিনিয়র আইনজীবীসহ এক ডজন আইনজীবী বাবুল আক্তারকে খুনের দায় থেকে বাঁচিয়ে নির্দোষ প্রমাণ করতে চান।
বাবুলের পক্ষে আদালতে ওকালতনামা দিয়েছেন আরও ছয় শীর্ষ আইনজীবী। তারা হলেন– এম জে ইউ মাসুদ চৌধুরী, তৌহিদুল এহেছান, এসএম শাকিল, শারমিন সুলতানা, এম আইয়ুব খান ও গোলাম মাওলা মুরাদ। তবে আরও কয়েকজন এ টিমকে সহায়তা করেন।
বাবুলের পক্ষে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের বিশেষ টিম আদালতে লড়লেও মামলার অপর আসামি মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া কোনো আইনজীবীই নিয়োগ দিতে পারেননি। অর্থ সংকটের কারণে চার আসামি নিজেরাই আদালতের অনুমতি নিয়ে সাক্ষীদের জেরা করছেন। আদালতে তাদের কোনো স্বজনকেও দেখা যায় না।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী চট্টগ্রাম মহানগর পিপি আবদুর রশিদ বলেন, বাবুল আক্তার স্ত্রী খুনের দায় থেকে বাঁচতে যেখানে যা যা করতে হয়, তাই করছেন। প্রতি শুনানিতে চট্টগ্রাম আদালতের অভিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবীদের তাঁর পক্ষে দাঁড় করাচ্ছেন। ওকালতনামা ছাড়াও তাঁর পক্ষের সিনিয়র আইনজীবীদের সহযোগিতা করছেন আরও অনেকে। সিনিয়র আইনজীবীদের একজনকে ৫ হাজার টাকা করে ফি দিলেও প্রতি শুনানিতে বাবুলের অর্ধলাখ টাকা খরচ হওয়ার কথা।
পিপি বলেন, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার ভিআইপি আসামিদের পক্ষে আদালতে একজন করে আইনজীবী ছিল। তবে বাবুলের পক্ষে এক ডজনের বেশি আইনজীবী লড়ছেন। চট্টগ্রাম আদালতে এই প্রথম কোনো আসামির পক্ষে এত আইনজীবী লড়ছেন।
মামলার অপর চার আসামি জানান, তারা সাত বছর ধরে কারাগারে বন্দি। দীর্ঘদিন বন্দি থাকায় তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছেন। আইনজীবী নিয়োগের টাকা তাদের কাছে নেই। তাই নিজেরাই সাক্ষীদের জেরা করছেন।
বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা এ নিয়ে সরাসরি কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জানান, বাবুল আক্তার রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসামি হয়েছেন। তাই বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সব দলের আইনজীবীরা তাঁর পক্ষে লড়ছেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের এক আইনজীবী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বাবুল আক্তার আওয়ামীপন্থি কোনো আইনজীবীকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তাই বিএনপি, জামায়াত ও এলডিপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবীদের ওপর ভরসা করেছেন। তাঁর আইনজীবীদের রাজনৈতিক পরিচয়ই বলে দিচ্ছে তিনি ছাত্রজীবনে কোন মতাদর্শে বিশ্বাস করতেন।
মিতু হত্যা মামলার শুনানি ১৫ দিন পরপর খুব দ্রুত গতিতে চলছে। চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে গত ২ মে প্রথম সাক্ষী দেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে।