ক্লাব ফুটবলে একই দল ফ্রান্সের প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) হয়ে একে অন্যকে সহযোগিতা করলেও জাতীয় দলে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই তারকা নেইমার ও লিওনেল মেসি এবার কাতার বিশ্বকাপ মাতাতে প্রস্তুত। অন্য যেকোন ক্লাবের বিপক্ষে মাঠে নামলে যতটা না উত্তেজনা বিরাজ করে ম্যাচটি যদি হয় ব্রাজিল বনাম আর্জেন্টিনা তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই পারদটা কয়েকগুন উপরে উঠে যায়। বিশ্বজুড়ে সমর্থকরাও প্রিয় দুই দলের দ্বৈরথ দেখতে যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
বয়সের বিবেচনায় সম্ভবত মেসি ও নেইমার দুজনেরই এটি শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে। নিজ নিজ দলের হয়ে এখন দুজনেই ক্লাব ছেড়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে হারিয়ে ব্রাজিলই বিশ্বকাপ শিরোপা জিতবে, মেসিকে এই কথা বলেছেন নেইমার। যদিও কথাটা মজার ছলেই বলা। পিএসজির হয়ে খেলার সময় জাতীয় দল নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না তারা। কিন্তু খুনসুটি তাদের মধ্যে লেগেই থাকে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেন, ‘আমরা বিশ্বকাপ নিয়ে খুব একটা আলোচনা করি না, তবে মাঝেমধ্যে মজা করি যে, ফাইনালে একে অপরকে গুঁড়িয়ে দেবো। আমি মেসিকে বলেছি তোমাদের বিপক্ষে জিতেই আমি চ্যাম্পিয়ন হব এবং আমরা দুজনেই সেটা নিয়ে হাসাহাসি করেছি।’
ফুটবলে যেকোন দলের জন্য ১০ নম্বর জার্সিটি তাদের সেরা খেলোয়াড়ের জন্যই তোলা থাকে। ব্রাজিলও তার ব্যতিক্রম নয়। অতীতের তারকাদের পথ অনুসরণ করেই ১০ নম্বরা জার্সিধারী নেইমারও নিজের প্রতিভা দিয়ে দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা সব ব্রাজিল সমর্থকেরই থাকে। এনিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বকাপে এই জার্সির ভার বহনের দায়িত্ব পড়েছে ব্রাজিলের এই মুহূর্তের সেরা খেলোয়াড় নেইমারের ওপর।
ফেব্রুয়ারিতে ৩১ বছরে পা রাখতে যাওয়া পিএসজরি এই সুপারস্টারের বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের এটাই হয়তোবা শেষ সুযোগ। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে ও ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু কোন আসরেই ব্রাজিল সফল হতে পারেনি। এবার না হলে আর কখনই সম্ভব না, এটা নেইমার যেমন জানেন, তেমনি জানে পুরো দলও। কোচ তিতেও তাই বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছি, এখন সময় চ্যাম্পিয়ন হবার। আর এটা নিশ্চিত করতে হলে নেইমার এবারের মৌসুমে যে দূরন্ত ফর্মে আছে সেটা বিশ্বকাপের মাঠে প্রমান করতে হবে।’
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ১২১ ম্যাচে ৭৫ গোল করা নেইমার ব্রাজিলের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলেকে ছাড়িয়ে যেতে আর মাত্র দুই গোল দুরে রয়েছেন। কাতারে এই সংখ্যা যে বাড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এই ধরনের চাপকে নেইমার স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ আমার কাছে সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। যখন থেকে ফুটবল সম্পর্কে ধারনা হয়েছে তখন থেকেই এই স্বপ্ন দেখে আসছি। এখন আমার সামনে আরো একটি সুযোগ এসেছে। আশা করছি তা পূরণ করতে পারবো।’
২১৪ মিলিয়ন ব্রাজিলিয়ান ছাড়াও বিশ্বজুড়ে সেলেসাওদের কোটি ভক্তের একটাই আশা ২০ বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে ষষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে নিয়ে আসা। আগের দুই বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, ‘দুটো বিশ্বকাপই আমার কাছে স্পেশাল, কারণ একটি ব্রাজিল আয়োজন করেছে এবং অন্যটি ছিল আমার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। আমি বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপও খুব স্পেশাল হবে । ২০০২ সালে যখন ব্রাজিল জিতেছিল, তখন বাবা ও পরিবারের সঙ্গে তা দেখেছিলাম। ওটাই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যা আমি ভালোভাবে অনুসরণ করি। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের কেবল ভিডিও দেখেছি তবে আমি এখনো রোমারিওর কিছু মুহূর্ত দারুনভাবে উপভোগ করি। রোমারিওকে আমি খুব পছন্দ করি। আমার আদর্শ অনেকেই। অবশ্যই পেলে, রোনালদো, রোমারিও, কাকা, রোনালদিনহো। তারা সবাই আমার প্রিয়।’
কাতারে ব্রাজিলের প্রত্যাশা প্রসঙ্গে নেইমার বলেন, ‘বিশ্বকাপ সবসময়ই চমকে ভরা। এমন অনেক দেশ থাকে যারা অনেকদুর পর্যন্ত যায়, কিন্তু তাদের নিয়ে হয়তো এতটা আশা থাকেনা। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এবারের বিশ্বাকাপে ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্স রয়েছে। আমি মনে করি এই চার দেশের সাথে ব্রাজিলের ফাইনালে খেলার পূর্ণ সক্ষমতা আছে। তবে ইংল্যান্ডের সুযোগও একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না। আমি সত্যিকার অর্থেই হ্যারি কেন, জেডন সানচোদের খেলা পছন্দ করি। তারা এই দলের সেরা দুই খেলোয়াড়। তাদের প্রতি আমার বিশেষ ভালবাসা আছে।’