ছোট ছোট চুরি দমনের ব্যর্থতার পর এবার বড় রকমের চুরির সামনে বাগেরহাটের রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। এতদিন মূল উৎপাদন কেন্দ্রের বাইরে চুরির ঘটনা ঘটলেও এবার কেন্দ্রের ভেতরের সুরক্ষিত তালাবদ্ধ ঘর থেকেই ঘটেছে যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা। ১৪ দিন ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এবার চুরি হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা পরীক্ষার যন্ত্র।
গণমাধ্যম সূত্রে খবর, ১৫ জানুয়ারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ল্যাব থেকে ‘বোম্ব ক্যালরিমিটার’ নামের কয়লার মান পরীক্ষার ওই যন্ত্রটি চুরি হয়। ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতে না পারায় এর ঠিক আগে থেকেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
অবশ্য, রামপালের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চুরির ঘটনা নিয়মিত দৃশ্য। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ শুরুর পর ১৫ মাসে র্যাব ও আনসার ব্যাটালিয়নের অভিযানে চুরি যাওয়া কোটি টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। আটকও হয়েছেন ৫৪ জন।
চুরির ঘটনায় কর্তৃপক্ষ নির্মাণশ্রমিকদের দায়ী করে আসছে। তবে, সুরক্ষিত এলাকা থেকে কয়লার মান পরীক্ষার যন্ত্র চুরির ঘটনায় করা মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকেই আসামি করা হয়নি।
বিষয়টি রহস্যজনক উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চোরচক্রকে আড়াল করতেই মামলায় ‘অজ্ঞাত চোর/চোরেরা সকলের অজান্তে ঘটনাস্থল থেকে চুরি করিয়া নিয়া গিয়াছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চুরির স্থল অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে, কেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ কর্মী ও কর্মকর্তা ছাড়া এমন চুরি সম্ভব নয়।
মামলার এজাহারে আমেরিকায় তৈরি বোম্ব ক্যালরিমিটার নামের মন্ত্রটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে আনুমানিক ৪৭ লাখ টাকা।
রামপাল থানা পুলিশ জানায়, ১৫ জানুয়ারি সকালে তালাবদ্ধ কয়লা টেস্টিং ল্যাব-২ এর দরজার নিচ দিয়ে পানি বের হতে দেখেন দায়িত্বরত কর্মীরা। পরে টেস্টিং ল্যাব খুলে পানি পরিষ্কারের পর দেখা যায় টেবিলের ওপর কয়লা পরীক্ষার যন্ত্রটি নেই। যন্ত্রটি দিয়ে আমদানি করা কয়লার মান পরীক্ষা করা হতো।
নির্দিষ্ট স্থানে সেটিকে না পাওয়ায় আশেপাশে খোঁজাখুঁজির পর কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতনদের খবর দেওয়া হয়। পরে কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) মো. অলিউল্লাহ বাদী হয়ে রামপাল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় কেন্দ্রের জুনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, কেমিস্ট আব্দুল মালেক ল্যাব বন্ধ করার সময় টেস্টিং যন্ত্রটি টেবিলের ওপরেই ছিল। আব্দুল মালেক চলে যাওয়ার আগে তালার চাবি ল্যাব-১ এর মুসা পারভেজকে দিয়ে ল্যাব টেকনিশিয়ান মো. সাদ্দাম হোসেন এবং তানভীর রহমানকে দিতে বলেন। মুসা পারভেজ তাদের চাবি দেন। রাত দশটায় সেখানে ডিউটিতে আসেন মো. জাকারিয়া আল রাজী এবং মাসুম বিল্লাহ। তারা ১৫ জানুয়ারি সকাল ৭টায় ডিউটি শেষ করেন। এ সময় মো. সাদ্দাম হোসেন এবং মো. মাসুম বিল্লাহ দায়িত্ব নেন। সকাল ৯টার দিকে রুম ক্লিনার আব্দুল নোমান ল্যাব-২ পরিস্কার করতে যেয়ে টেবিলে যন্ত্র দেখতে না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।
ঘটনার ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চুরি যাওয়া ঐ যন্ত্র বা চোর চক্রের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।