ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ঘিরে পুরো রাজধানী জুড়ে ব্যাপক তল্লাশি চালায় পুলিশ। রাজধানীর প্রবেশমুখগুলো গতকাল থেকে পুলিশের তল্লাশির চিত্র দেখা যায়। দুই বড় দলের মহাসমাবেশকে ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে এই তল্লাশি চালানো হচ্ছে দাবি পুলিশের।
তবে বসিলা ওয়াশপুর এলাকায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে ইটবোঝাই ট্রাক দিয়ে পুলিশ তল্লাশি চালায়। এ সময় আশপাশের পুরো এলাকাজুড়ে দীর্ঘ ঝানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীসহ যাত্রীরা।
তবে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ দাবি করে বলেন, ইটবোঝাই ট্রাকগুলো এখানে এসে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে এ কারণে মানুষের যাতায়াতের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
রাস্তার মাঝখানে এসে আড়াআড়িভাবে দুটি ট্রাক কীভাবে নষ্ট হয়ে গেল এবং কখন নষ্ট হলো— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এ ঘটনায় ট্রাক ড্রাইভার মাহমুদ দাবি করেন, সাভারের সলমাসি থেকে ইট নিয়ে মোহাম্মদপুর মেট্রো হাউজিং এলাকায় যাচ্ছিলেন। সকাল ৯টার দিকে বসিলা ব্রিজের প্রবেশমুখ ওয়াশপুর এলাকায় আসতেই পুলিশ তাকে আটকে রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি করে এক ঘণ্টার জন্য ট্রাকটি রাখতে বলেন। তিনি পুলিশের কথামতোই রাস্তার মাঝখানে ট্রাকটি রেখে অপেক্ষা করতে থাকেন।
তিনি আরও জানান, আমি এসে দেখি আমার আগে আরও একটি ট্রাক রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি করে রাখা। দুপাশ দিয়ে কোনোরকমে গাড়ি পার হওয়ার জন্য সামান্য জায়গা রাখা হয়েছে। আমাকে এক ঘণ্টা রাস্তা আটকে রাখার জন্য বললেও এখন প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ এখনো আমাদের যেতে দিচ্ছে না।
সরেজমিন বসিলা ওয়াশপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেরানীগঞ্জ থেকে মোহাম্মদপুরের প্রবেশমুখ বসিলা ব্রিজের পাড়ে ওয়াশপুর এলাকায় ইটবোঝাই দুটি ট্রাক রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে রেখে পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে। চেকপোস্টের পাশাপাশি যাত্রীবাহী সব গাড়ির যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তল্লাশি করা হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি করে ট্রাক রেখে রাস্তা বন্ধ করে পুলিশের তল্লাশির বিষয়ে পথচারীরা তাদের দীর্ঘ ভোগান্তির অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কলাতিয়া এলাকা থেকে আসা শাহনাজ বেগম জানান, আমি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে যাব। সেখানে আমার বড় মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। কলাতিয়া থেকে সিএনজিতে ওঠে এখানে এসে দেখি রাস্তার মাঝখানে ট্রাক রেখে পুলিশ তল্লাশি করছে। তাদের নানা রকম প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে আমি বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে গেছি। পুলিশের এমন হয়রানিমূলক তল্লাশির কারণে আমি সময়মতো হাসপাতালে যেতে পারব না।
শাহনাজের মতো কেরানীগঞ্জের কোনাখোলার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান জানান, আমি কোনাখোলা থেকে জরুরি কাজে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে যাব। এখানে আসার পর পুলিশ গাড়ি থেকে নামিয়ে কোথায় যাব, কার কাছে যাব, কেন বাসা থেকে বের হলাম। এমন নানা রকম প্রশ্ন করে আমাকে হয়রানি করেছে। পাশাপাশি রাস্তার মাঝখানে ট্রাক আড়াআড়ি করে রেখে রাস্তা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এমন ভোগান্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের মতো এমন বেশ কয়েকজন পথচারী রাস্তার ওপর ট্রাক রেখে পুলিশের এমন তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগ করেন।