ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার শাড়ি নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে মারামারিতে জড়িয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষ। এ ঘটনায় এক পক্ষের তিন নেত্রীসহ চারজন আহত হন। অবশ্য পরে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে ঘটনাটির মীমাংসা হয়।
জানা যায়, মূলত শাড়ি নিয়ে বিবাদ থেকে সংগঠনের হল শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে না গিয়ে এক নেত্রী নিজের অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে কর্মসূচিতে যান। এরপরেই তাদের মাঝে ক্ষোভের সূত্রপাত ও মারামারি হয়।
গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল প্রাঙ্গণে এমন ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই বঙ্গমাতা হলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। পরে সেখানে গিয়ে বিবদমান দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হলটির প্রাধ্যক্ষ নিলুফার পারভীনও।
গত ২০ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি ঘোষণার পর পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। নতুন চার শীর্ষ নেতাকে (কেন্দ্রীয় দুই নেতা সাদ্দাম হোসেন ও শেখ ওয়ালী আসিফ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মাজহারুল কবির ও তানভীর হাসান) ঘিরে অঞ্চলভিত্তিক নতুন পক্ষ তৈরি হওয়ায় হল শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের কর্তৃত্ব এখন শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু কিছু হলে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকেরা কর্তৃত্ব ছাড়তে চাইছেন না। বঙ্গমাতা হলে হাতাহাতির ঘটনাটির পেছনেও একই কারণ কাজ করেছে।
বঙ্গমাতা হল সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রা উপলক্ষে অন্য ছাত্রী হলগুলোর মতো বঙ্গমাতা হলেও নেতা-কর্মীদের জন্য একই রঙের শাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এসময় বঙ্গমাতা হলের নেত্রী তানিয়া আক্তার তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের জন্য শাড়ি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা। উল্লেখ্য, তানিয়া আক্তার এই হলের আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক রনকের অনুসারী। অন্যদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব পেয়েছিলেন কোহিনূর ও সানজিদা।
পরবর্তীতে, শাড়ি নিয়ে বিরোধের জেরে তানিয়া তার নিজ অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবে সাধারণ পোশাকে শোভাযাত্রার কর্মসূচিতে অংশ নেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোহিনূর ও সানজিনার অনুসারীরা তানিয়াকে হলছাড়া করার হুমকি দেন। শোভাযাত্রা শেষে সন্ধ্যার পর হলে গেলে রনক জাহান, তানিয়া ও তাঁদের অনুসারীদের সঙ্গে কোহিনূর-সানজিনা ও তাঁদের অনুসারীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তা মারামারিতে রূপ নেয়৷
কোহিনূর-সানজিনা ও তাদের অনুসারীদের মারধরে আহত হন বঙ্গমাতা হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পরে কেন্দ্রীয় উপসম্পাদক হওয়া রনক জাহান, সদ্য সাবেক কেন্দ্রীয় উপসম্পাদক তানিয়া আক্তার ও রনকের অনুসারী সুলতানা।
এ সময় খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নামা ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাহিদা আক্তারকে তানিয়ার অনুসারী ভেবে মারধর করেন কোহিনূর-সানজিনার অনুসারীরা। যদিও শাহিদা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। আহত চারজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে রাতেই হলে ফিরেছেন।