সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পতন ঘটিয়ে নিবন্ধন নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার জানিয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। মূলত সরকার ও এজেন্সির পরামর্শে গণঅধিকার পরিষদকে ইসি নিবন্ধন দেয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
রোববার (১৬ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক বলেন, দলগুলোর নিবন্ধনে যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক একজন উপসচিব ও অতিরিক্ত জেলা জজ। যিনি আইনকানুন সম্পর্কে ভালো বোঝেন। তার সঙ্গে কথা বলে দেখুন তিনি কী তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের কপিও আমাদের হাতে রয়েছে। তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে লিখে দিয়েছেন, গণঅধিকার কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তারা নিবন্ধনের যোগ্য, এটা তদন্ত কমিটি লিখেছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সরকার ও এজেন্সির পরামর্শে আমাদের নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন দেয়নি ভালো, তবে আমরা এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পতন ঘটিয়েই আগামী নির্বাচনের আগে নিবন্ধনও নেব এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক বিষয়ের আপডেট চিঠি নিয়ে এখানে সশরীরে হাজির হয়েছি। এর আগে সাধারণত আমরা চিঠি নিয়ে সশরীরে এখানে আসিনি। আমরা মনে করেছি যে, নিবন্ধনের কার্যক্রমটা যেহেতু চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং মাঠ পর্যায়ে তাদের (ইসির) যে কর্মকর্তারা আছেন, তারা বিভিন্ন এজেন্সির দ্বারা প্রভাবিত। ডিজিএফআই, এনএসআই নিবন্ধন কার্যক্রমে বাধাগ্রস্তের পরিবেশ তৈরি করেছে। আমরা আমাদের কার্যক্রম লিখিতভাবে ডকুমেন্টসহ তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি।’
সিইসির কথাবার্তায় একটু অসহায়ত্বের ছাপ ফুটে উঠেছে উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর আমরা নির্বাচন কমিশনের সাক্ষাৎ পেয়েছি। সিইসির সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ভালো কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করলেও এই পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য করতে পারছেন না। তার হাত-পা বাঁধা। আমরা তার কথাবার্তা ও কার্যক্রমে বুঝতে পেরেছি।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘যে দুইটি দলকে তারা আজকে নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত করল। এ দুটি দলের কার্যক্রম আপনারা মাঠে কতদিন দেখেছেন? এদের হেড অফিস কোথায় আপনারা কেউ দেখেছেন? আমি তাদের বলেছি, গুগলে সার্চ দিয়ে দেখেন, তাদের দলের কার্যক্রম সম্পর্কে মূল ধারার গণমাধ্যমে কোনো সংবাদ পান কিনা। তাহলে এরা কোথা থেকে নিবন্ধন পেল, কারা এদের বানাল। শেখ হাসিনা সরকার বানিয়েছে, এই ১৪ দল থেকে যেন আগামীতে ২০ দল হতে পারে এবং বিএনপিকে টেক্কা দিতে পারে। তাই এজেন্সির পরামর্শে নির্বাচন কমিশন এই দুটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে, সরকারের আজ্ঞাবহ এবং তারা যে দলদাস ভূমিকায় অবতীর্ণ সেটি তারা প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি, এই মেরুদণ্ডহীন দলদাস কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। যে কারণে বিরোধী দলগুলো এক দফা দাবিতে আন্দোলন করছে। আমাদের ঘোষণা পরিষ্কার, নিবন্ধন ও নির্বাচনে সময় ক্ষেপণ করে মূল ফোকাস থেকে দূরে সরে যেতে চাই না। বর্তমানে এক দফা আন্দোলন চলছে। এক দফা হচ্ছে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।’
তিনি বলেন, ‘আজকে যারা দালালি করেছে, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আপনাদের অধীনে আগামীতে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে, নতুন সরকার গঠন হবে, দালালির পুরস্কার আপনারা পাবেন। জনগণ আপনাদের রাস্তাঘাটে দেখলে থুথু মারবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হক নূর বলেন, ‘আমাদের নিবন্ধন না পাওয়া দলীয় কোন্দলের কোনো বিষয় না। প্রত্যেকটা দলের কিছু নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রম থাকে এবং আমরা সেটা কমিশনকে সাংগঠনিকভাবে অবহিত করেছি। যেসব দল মাঠে একটিভ আছে, সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় আছে, তাদের নিবন্ধন দেয়নি। নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনের শর্ত ছিল ২২টি জেলায় কমিটি থাকতে হবে। আমাদের অলরেডি ৫৩টি জেলায় কমিটি আছে। ইসির শর্ত ছিল ১০০ উপজেলা কমিটি কিন্তু আমাদের দুই শতাধিক উপজেলা কমিটি আছে। তাহলে আমাদের দুর্বলতা কোথায়? তারপরও আমাদের নিবন্ধন দেওয়া হলো না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচন চলাকালে গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য ডেকেছিল। মিটিং করতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগের নেতাদেরসহ। যদি আমরা নির্বাচনে যাই এবং তাদের সাথে যদি একমত পোষণ করি তাহলে দলের নিবন্ধনও দেওয়া হবে ও আগামী নির্বাচনে কিছু সিট দিয়ে এমপিও বানানো হবে। কিন্তু আমরা পরিষ্কার করেছি যে, আজকে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে নির্বাচন ও বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে বাংলাদেশকে যারা ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ক্ষমতায় রেখে দেশ ও জাতির সর্বনাশ আমরা করতে পারব না। দলীয় সরকারের অধীনে গণঅধিকার পরিষদ কোনো নির্বাচনে যাবে না।
নিবন্ধন ফিরে পেতে আদালতে যাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের নিয়ন্ত্রিত ক্যাঙ্গারু কোর্টে মানুষ ন্যায় বিচার পায় না। ওখানে মানুষ অবিচারের শিকার হয়। আমরা রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন করে এবং নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠনের মাধ্যমে জনগণকে সম্পৃক্ত করেই দাবি আদায়ের চেষ্টা করব এবং দলের নিবন্ধন নিব।’