সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ‘জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস’ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকার বেশি অর্থ। কোনোপ্রকার প্রকল্প ছাড়াই পাশ হয়ে যাওয়া এই প্রকল্প এবং অর্থবন্টন নিয়ে আছে বড় প্রশ্ন। প্রশ্ন আছে বইয়ের মান নিয়েও।
সরকারি কর্মকর্তাদের পাঠ্যাভ্যাস জেলা-উপজেলায় বই কিনতে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে পাঠানো হয়েছে ১ হাজার ৪৭৭টি বইয়ের তালিকা। এরই মধ্যে বই কিনতে শুরু করেছেন জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা। তবে বিতর্কের শুরু হয় যখন দেখা যায়, পাঠানো তালিকার মধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিবেরই রয়েছে ২৯টি বই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নবীরুল ইসলামের লেখা ২৯টি বই, যার অধিকাংশই কবিতার বই। এর মধ্যে ২৪টি প্রকাশিত হয়েছে মাত্র একটি প্রকাশনী থেকেই।
শুধু নবীরুল ইসলামই নন। সরকারি এই তালিকার ১ হাজার ৪৭৭টি বইয়ের মধ্যে শতাধিক বই অন্তত ২৫ জন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার লেখা। যার মধ্যে প্রসঙ্গের মিলও আছে ব্যাপক। তালিকায় জায়গা হয়নি পল্লিকবি জসীমউদ্দীন, আবু জাফর শামসুদ্দীন, ঔপন্যাসিক শওকত আলী বা বদরুদ্দীন উমরের মতো গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের কোনো।
আবার, বিশ্লেষণ শেষে দেখা যায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেয়া এই তালিকায়, ভাষা আন্দোলন–সম্পর্কিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র ১১। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জীবনি নিয়ে বইয়ের সংখ্যা ১৬৬টি। এর মধ্যে অন্তত ৪০টি বই ১৫ জন সরকারি কর্মকর্তার লেখা। এছাড়া একই সংসদ সদস্যের ৪ টি বইও আছে এই তালিকায়।
তালিকায় আছে আইনকানুন, দাপ্তরিক বিভিন্ন জরুরি প্রসঙ্গ, ইতিহাস ও দর্শনের প্রয়োজনীয় অনেক বই। তবে এ তালিকায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখকের বই স্থান না পাওয়ায় নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন এসেছে। এছাড়া, নির্দেশনা অনুযায়ী, এই বই কেবলই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য। তবে অফিস চলাকালীন সময়ে ঠিক কিভাবে বই পড়া হবে তা নিয়েও আছে প্রশ্ন!
উল্লেখ্য, এরইমাঝে মন্ত্রণালয়ের ‘বইপত্র ও সাময়িকী’ খাত থেকে বই কিনতে দেশের ৪৯২ উপজেলা কার্যালয়ের জন্য দেড় লাখ টাকা, ৬৪ জেলা প্রশাসক ও ৮ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের জন্য তিন লাখ টাকা করে দেওয়া হয়েছে।