প্রেম মানে না বাঁধা-বিপত্তি দেশকাল কিংবা সীমান্তের গণ্ডি। সেই সত্য আবারও প্রমাণ করলেন ইন্দোনেশিয়ার তরুণী নিকি উল ফিয়া। সাত বছরের প্রেমের পরিণতি টেনে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন পটুয়াখালীর বাউফলের মো. ইমরান হোসেনের সঙ্গে।
দীর্ঘ সাত বছরের ভার্চুয়াল প্রেমের অবসান ঘটিয়ে বুধবার রাতে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ইমরান ও নিকি উল ফিয়ার। রাতে সাড়ে ৭টার দিকে ১০১ টাকা দেনমোহরে নিকিকে বিয়ে করেন ইমরান। স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলাম এই যুগলের বিয়ে পড়ান। আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ভিন্ন দুটি দেশের ভিন্ন ভাষাভাষীর দুজন তরুণ-তরুণীর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর বিয়ের জন্য ২০১৭ সালে পটুয়াখালীর বাউফলে এসেছিলেন নিকি উল ফিয়া। বিয়ের বয়স না হওয়ায় তখন নিজ দেশ ইন্দোনেশিয়ায় তিনি চলে যান।
পাঁচ বছর পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সোমবার ফ্লাইটে করে বাংলাদেশের শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন ওই তরুণী নিকি। ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে বুধবার সকালে পটুয়াখালীতে আসেন তিনি।
ইমরানের ভাষ্য ছিল, ২০১৬ সালে ফেসবুকে ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে নিকির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর বন্ধুত্ব, একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক হয়। পরে তাঁরা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পরিবারের কোনো আপত্তি না থাকায় ২০১৭ সালের ১ ডিসেম্বর হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন নিকি উল ফিয়া। সেখান থেকে ইমরান নিকিকে তাঁর বাউফলের বাড়িতে নিয়ে আসেন। তখন তাঁর ২১ বছর না হওয়ায় বিয়ে করতে পারেননি। তখন ফিরে যান নিকি।
বুধবার (১ মার্চ) দুপুরে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আশিকুর রহমানের সামনে উপস্থিত হয়ে এফিডেভিডের মাধ্যমে বিয়ের সম্মতি দেন। এতে বিজ্ঞ আইনজীবীর সহযোগিতায় বিয়ের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করে বাউফলের উদ্দেশ্য রওনা করেন।
এই আয়োজনের কেন্দ্রে থাকা ইমরান বাউফলের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বর্তমানে তার বয়স ২৫ বছর। আর নিকি উল ফিয়ার বয়স ২৩ বছর। নিকি ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া প্রদেশের জেম্বার এলাকার বাসিন্দা ইউলিয়ানতোর মেয়ে। তার মায়ের নাম শ্রীআনি।
ইমরানের বাবা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ইমরানের বাড়িতে বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান হবে। ইন্দোনেশিয়ার তরুণীর বাবা-মায়ের সম্মতিতে বিয়ের তারিখ ও সময় ঠিক করা হয়েছে।
ইমরান হোসেন বলেন, নিকির সঙ্গে আমার সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক। আমরা জজকোর্টে এসে বাংলাদেশি আইনে নিয়ম মেনে বিয়ের সম্মতি দিয়েছে। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
ইন্দোনেশিয়ান তরুণী নিকি উল ফিয়া জানান, বাংলাদেশ আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আজকের দিনের জন্য আমি খুব খুশি এবং আমি সারা জীবন বাংলাদেশে থেকে যাব।
যেহেতু সে অন্য একটি দেশের মেয়ে আমাদের বাংলাদেশে এসেছে। আমার কাছে ভালো লাগছে। আমরা ছোট পরিসরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছি বলে জানান ইমরানের মা মোসাম্মাদ বিথী আকতার।
জজকোর্টের আইনজীবী মো. আল আমিন হাওলাদার বলেন, ইন্দোনেশিয়ার মেয়ে নিকি উল ফিয়া আদালতে উপস্থিত হয়ে বাউফলের দাসপাড়া ইউনিয়নের ইমরান হোসেনের সঙ্গে বিয়ের সম্মতি দিয়েছেন। পরবর্তীতে কাজির মাধ্যমে ইসলামিক শরিয়া মোতাবেক তার বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে।