সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাড়ভাঙার চিকিৎসা নিতে যাওয়া এক রোগীর কিডনি অপসারণ করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিডনি চুরির অভিযোগে গত বুধবার (১ মার্চ) সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ভুক্তভোগী মামলা করেন।
ভুক্তভোগী খসরু মিয়া (৫৫) সিলেটের কানাইঘাট থানার ফতেহগঞ্জের মৃত মজম্মিল আলীর ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আমিনুল হক খান বলেন, ‘অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আব্দুল মোমেন জবানবন্দি নিয়ে মামলাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মামলা এফআইয়ার ক্রমে তদন্তের আদেশ দিয়েছেন।’
তবে আদালত থেকে এখনও কোনও নির্দেশনা পাননি জানিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, নির্দেশনা এলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গাছ থেকে পড়ে বাঁ-হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে গেলে গত বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন দিনমজুর খছরু মিয়া। এর মধ্যে ১৭ নভেম্বর সকালে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে তার বাঁ হাতের অস্ত্রোপচার শেষে বাঁ দিকের কিডনি বের করে নেন। অস্ত্রোপচার শেষে খছরু মিয়ার জ্ঞান ফিরলে তিনি বাঁ হাতের পাশাপাশি বাঁ দিকের কিডনির পাশে অস্ত্রোপচারের চিহ্ন দেখতে পান। এ সময় খছরু মিয়ার স্বজনেরা বিষয়টি জানতে চাইলে চিকিৎসকেরা কোনো সদুত্তর দেননি।
ভুক্তভোগী দাবি করেন, কিডনি থেকে একটি শিরা নিয়ে বাঁ হাতে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে তাকে চিকিৎসক জানিয়েছিলেন। তড়িঘড়ি করে অস্ত্রোপচারের এক দিন পর হাসপাতাল থেকে তার ছাড়পত্র দেয়া হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফেরার পর খছরু মিয়ার প্রস্রাব ও মলত্যাগে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।
গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় গত ১৫ জানুয়ারি বেসরকারি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আলট্রাসনোগ্রাম করে খসরু মিয়া জানতে পারেন, তার বাঁ দিকের কিডনি নেই।
ওসমানী মেডিকেলের চিকিৎসকেরা তার কিডনি অপসারণ করে নিয়েছে বলে খছরু মিয়ার অভিযোগ।
মামলায় বিবাদী হিসেবে কারও নাম উল্লেখ না করলেও গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন করা সহকারী রেজিস্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৯নম্বর পুরুষ ওয়ার্ডের অর্থপেডিক্স বিভাগ ইউনিট-১ এর রেজিস্ট্রার ডা. হাসানুল হক প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়টি জানা নেই। তাছাড়া ওই বিভাগের আমরা কিডনির চিকিৎসক নই। আমরা তো অর্থপেডিক্সের চিকিৎসক। ওই বিভাগে যারা ভর্তি হয় তারা অর্থপেডিক্সের, হাড় ভাঙা রিলেটেড রোগী ভর্তি হয়। অনেক সময় দেখা যায় যেসব রোগীর হার ভাঙার পর ২১ দিন চলে গেলে অপারেশন করার ক্ষেত্রে কোমরের সামনের দিক থেকে হাড় নিতে হয়। সেক্ষেত্রে হয়তো হাড় নেয়া হয়েছে। এটা রোগীকেও আগে জানানো হয়। যেটাকে অটোগ্রাফ্ট বলেন।’
ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন বেশি দিন হয়নি। আদালতের এমন কোনো নির্দেশনা বা অভিযোগের ব্যাপারে তিনি অবগত নন।’
বিষয়টি তিনি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন বলেও তিনি জানান।