বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে অভিন্ন সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনায় আরও সতর্কতা বজায় রাখতে বলেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ বিভাগের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমান্ড ব্যুরো অব স্পেশাল অপারেশনের লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফোন মায়াতের নেতৃত্বে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ২৬ অক্টোবর সেনাবাহিনী সদর দপ্তরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন।
সফরকালে প্রতিনিধি দল সৌজন্য বিনিময় ছাড়াও মিয়ানমারের চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। এতে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক বন্ধুত্ব বজায় রেখে তাদের দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছেন।
সেনাপ্রধানরা দুই দেশের সামরিক সম্পর্কের উন্নয়ন, বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের যৌথ আলোচনা, প্রশিক্ষণ বিনিময়, যৌথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, প্রাসঙ্গিক তথ্য বিনিময় নিয়ে আলোচনা করেন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান প্রধান বলেন, বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকরা একটি আঞ্চলিক সমস্যা এবং এদের বাংলাদেশে থাকার কারণে সৃষ্ট নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর করার জন্য রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের প্রতিনিধি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও বৃহত্তর যোগাযোগের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
পরে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
তিনি সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনায় সতর্ক থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জঙ্গিরা কোনো দেশের জন্য কাজ করে না।
২২ অক্টোবর এক সপ্তাহের স্থবিরতার পর ছয় ঘন্টা ধরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ক্রমাগত গুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের মুখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি ও ঘুমধুম ইউনিয়নের ৩০ পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়।
রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের কাছে অবস্থান নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এর পরিবর্তে তারা মিয়ানমারের গভীরে কাজ করছে। কিন্তু গত সপ্তাহে আরাকান আর্মি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান নিয়েছে।
রাখাইনে যুদ্ধ যেমন বেড়েছে, তেমনি সীমান্তে এসব ঘটনার মাত্রা ও পুনরাবৃত্তিও বেড়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এ সময় পর্যন্ত দুই বাংলাদেশি যুবক আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছে বিপজ্জনকভাবে মিয়ানমারের সশস্ত্র দল তাতমাদাওদের বিছানো ল্যান্ডমাইনে পা দিয়ে অঙ্গ হারিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে আগস্ট থেকে বেশ কয়েকবার তলব করেছে এবং তিনি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে একাধিক মর্টার শেল নিক্ষেপের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
রাষ্ট্রদূত অবশ্য বিদ্রোহীরা যুদ্ধে নিয়োজিত ছিল বলে দাবী করে দোষ প্রত্যাহার করার চেষ্টা করেছিলেন।