আমি যদি সেন্টমার্টিন দিয়ে দিই, তাহলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি দেশের গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু আমি সেটা করব না। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি দেশ বিক্রি করে দেশের ভূখণ্ড বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকতে চাই না।
বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফরের ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে অবহিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সংবাদ সম্মেলন করেন। বুধবার (২১ জুন) দুপুর ১২টার পরে গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়।
এর আগে গত ১৪ থেকে ১৫ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট : সোশ্যাল জাস্টিস ফর অল’ শীর্ষক সম্মেলনে যোগদান শেষে গত শনিবার (১৭ জুন) দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী। ২৩ থেকে ২৫ মে কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত তৃতীয় কাতার ইকোনমিক ফোরামে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে বিবেচনা করতে হবে তারা কী চায়। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক সেটা চায়, নাকি ২০০৭ সালের মতো আবার ইমার্জেন্সি? আবার অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ক্ষমতায় যাক। আবার শুরু হবে ধরমার। জনগণ কী চায় সেটা তাদের ঠিক করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত অনেক অগ্নিসংযোগ করেছে। অনেক মানুষ পঙ্গু হয়েছে। সেটা কী মানুষ ভুলে যাবে।
২০০১ সালে বিএনপি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা কী চায়। আমি যদি এখন সেন্টমার্টিন দিয়ে দিই তাহলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারি। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এটা আমার হাত দিয়ে হবে না। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারতাম। আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ দিব না। আমার দেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম করবে, নাশকতা করবে সেটা হতে দেব না। কেননা এ অঞ্চলে আমরা শান্তি চাই, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা যখন এসেছিল তখন আমরা মিয়ানমারের সাথে কোন সংঘাতে জড়াইনি। কারণ আমরা শান্তি চাই।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ ছোট্ট ভূখণ্ড কিন্তু বিশাল জনগোষ্ঠী। সবার খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা আমাদের পূরণ করতে হয়। আমাদের জনসংখ্যা যত, কিন্তু চাষাবাদের জমি সীমিত। আমরা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখেছি। মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। আমাদের হাতে যেগুলো আছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কিন্তু বাইরের থেকে যা আনা হচ্ছে তার দাম বেড়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পরে, আমার ছোট ১০ বছরের ভাইকেও ছাড়েনি তারা। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে; বঙ্গবন্ধুর কোন রক্ত যেন এদেশের ক্ষমতায় না আসতে পারে, এই জন্যে। সেখানে আমি এই দেশের ক্ষমতায় এসেছি চার চার বার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নতিও করেছি। আমি নিজে ক্ষমতা ভোগ করতে আসিনি, দেশের মানুষের উন্নতি করতে এসেছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী ছিল ও স্বাধীনতা খর্ব করেছিল; তারা এদেশের গণতন্ত্র হরণ করে গণতন্ত্রের প্রবক্তা সেজেছে। স্বাভাবিকভাবে তারা এদেশের কোনদিন কল্যাণ চাবে না। সেখানে ঘোলাটে পরিবেশ করতে চাইবে। আমি মনে করি আমার দেশের সচেতন নাগরিক তারা এটা গুরুত্ব কেন দিবে?
তারা বিচার করবে বাংলাদেশ আজ থেকে ১২ থেকে সাড়ে ১২ বছর আগে, ২০০৯ এর আগে বাংলাদেশ কোথায় ছিল? বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা কোথায় ছিল? এমন প্রশ্ন রেখে সরকারপ্রধান বলেন, এই সাড়ে ১৪ বছর পরে বাংলাদেশের অবস্থা কোথায় দাঁড়িয়েছে। আমাদের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে কী হয়নি। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছি কি না। দেশের মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে কি না। আপনারা সচেতন নাগরিক এটাই তো বিবেচনা করবেন।