স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে যেতে রাজি হয়েছেন এমন রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর। মিয়ানমারে যেতে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে আসা ৪ পরিবারের নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৩ জন (রোহিঙ্গা) মিয়ানমার নাগরিকের খাবার বন্ধ করে দিয়েছে দাতা সংস্থাটি। এতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে ওই রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। এমনকি সোমবার রাতেও তাদের খাবার দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চলমান প্রত্যাবাসন আলোচনায় পরিবারগুলো নিজ মার্তৃভূমিতে ফিরে যেতে রাজি হয়। কিন্তু সোমবার (৫ জুন) সকাল থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটি তাদের আর সহায়তা করছে না বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে গত ২৪ মে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে উঠেছেন চার রোহিঙ্গা পরিবারের ২৩ জন সদস্য। তারা এখন মিয়ানমারে চলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
মিয়ানমারে ফিরতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের দাতা সংস্থা ইউএনএইচসিআর কর্তৃক খাবার দেওয়া বন্ধ করা প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোববার থেকে হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই মিয়ানমারে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের (রেশন) খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। এতে করে আমরা চরম বেকায়দায় পড়েছি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যাক আর না যাক খাবার পাওয়া প্রত্যেকের অধিকার।
রোহিঙ্গাদের খাবার সরবরাহের বিকল্প ব্যবস্থা বিষয়ে জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, সোমবার সকালে ও দুপুরে আমাদের (সিআইসি) অফিস থেকে খাবার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাতে কোথা থেকে রোহিঙ্গাদের খাবার দেব আমি জানি না।
মিয়ানমারে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের খাবার দেওয়া বন্ধের বিষয়টি ইউএনএইচসিআরের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হলেও এর বিস্তারিত কোনো ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত দেয়নি বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ইউএনএইচসিআরের দায়িত্বশীল কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে মিয়ানমারে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মাঝে ইউএনএইচসিআর খাবার বন্ধ খবরে প্রত্যবাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজ করছে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের রাজি করানোর দায়িত্ব থাকা সংশ্লিষ্টদের মাঝে।
এবিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মিয়ানমারে যাওয়ার আগে যদি এমন পরিবেশর সৃষ্টি হয়। তাহলে সামনে প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে কষ্ট হবে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের মাঝে খারাপ ধারণা তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের রাখাইনে ফেরত নিতে প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তি স্বাক্ষর করলেও রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। এ কমিটি একাধিক সভা করলেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। তবে খুব দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যবাসন শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।