একটি চক্র ২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩০টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে হাজার হাজার ভরি স্বর্ণ লুট করে নেয়। এই চক্রটি টার্গেট স্বর্ণের দোকানে বোমা ফাটিয়ে ৫-৭ মিনিটের মধ্যেই স্বর্ণালঙ্কার লুট করে পালিয়ে যেতো।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ।
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় বোমা ফাটিয়ে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় ডাকাত চক্রের মূলহোতা ল্যাংড়া হাছানসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. আরিফ (২৬), মো. আইনুল হক ওরফে ভোলা (৪২), মো. সাইফুল ইসলাম মন্টু (৪৫), মো. আনসার আলী (৫০) ও মো. শাহীন (৩৫)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, পাঁচটি চাপাতি ও ডাকাতি শেষে পালিয়ে যেতে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, রাজধানীর ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, রাজধানী ঢাকাসহ মানিকগঞ্জ, ফেনী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের ভালুকা, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করে আসছিলো দুর্ধর্ষ আন্তঃজেলা এই ডাকাত দলটি।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, ২০১২ সালে চট্টগ্রামে ডাকাতি করতে গিয়ে পায়ে পুলিশের গুলি লাগে চক্রের মূলহোতা হাছান জমাদ্দার ওরফে ল্যাংড়া হাছানের (৩৪)। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে গেলেও সেখানে বসেই পরিচালনা করে যাচ্ছিল এই ডাকাতচক্র। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিক হওয়ার পর ডাকাতির আগমুহূর্তে হাছান দেশে আসতেন, এরপর ডাকাতির মালামাল ভাগবাটোয়ারা করে আবার ফিরে যেতেন ভারতে। দেশজুড়ে প্রায় ১৭টি মামলার আসামি ল্যাংড়া হাছানের পাসপোর্ট ইমিগ্রেশনে ব্লক করে রাখা থাকলেও তার ভারতে আসা-যাওয়া ছিলো অবৈধভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত হয়ে।
দলটির মূল হোতা ল্যাংড়া হাছান ভারতে বসে সহযোগীদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণের দোকান টার্গেট করত। এরপর ডাকাতির আগে তারা সেই দোকানের আশেপাশে একটি বাসা ভাড়া নেয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা দোকানের আশেপাশে রেকি করে প্রস্তুতি গ্রহণ করত। সব কিছু ঠিক হলে হাছান ভারত থেকে এসে দলে যোগ দেয়। প্রথমে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ৫-৭ মিনিটের মধ্যে দোকানের স্বর্ণালঙ্কার লুট করে আগে থেকে ঠিক করে রাখা গাড়িতে করে পালিয়ে যেতো।
হারুন-অর-রশিদ আরও বলেন, এই চক্রটি ডাকাতির মালামাল কোথায় বিক্রি করে সেই তথ্য আমরা পেয়েছি। পুরান ঢাকার তাঁতিবাজারে কিছু চক্র রয়েছে যারা এসব মালামাল কিনে থাকে। আমরা অনেকের নাম পেয়েছি, তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
ডিবি প্রধান জানিয়েছে, ডাকাত দলের মূলহোতা ল্যাংড়া হাছানের টার্গেট স্বর্ণের দোকান।২০০৮ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বোমা ফাটিয়ে ডাকাতি করতো। ২০১২ সালে চট্টগ্রামে একটি দোকানে ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির সময়ে পায়ে গুলি লাগে হাছানের। তার বিরুদ্ধে ডিএমপিসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির হারুন বলেন, ল্যাংড়া হাছানের ভারতের নাগরিক কার্ড করেছে। তার পাসপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকে ব্লক করে রাখা। তাই তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে আসা-যাওয়া করতেন৷ তার আশ্রয়দাতাদের বিষয় খোঁজ নেওয়া হবে।
এ চক্রটি হাছানের নেতৃত্বে সারাদেশে ২৫ থেকে ৩০টি ডাকাতি করেছে। এই ডাকাতির মাধ্যমে হাজার হাজার ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়েছে।
হারুন-অর-রশীদ বলেন, সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে ডাকাতি করার পরে ফেনীতে ডাকাতি করে। সেখানে ডাকাতির সময়ে একজনকে গুলি করে। সেই ব্যক্তি পরে মারা গেছেন।