কুষ্টিয়ায় ছাত্ররাজনীতি ঘিরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রিদোয়ান আফ্রিদী (২৩) সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার(১৯ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে কলেজ মাঠের পেছনের গেটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
রিদোয়ান সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্র। কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শাখার সাবেক সদস্যসচিব হিসেবে তিনি বেশ সক্রিয় ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, কলেজ হোস্টেলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রদলের বিরোধিতায় নেতৃত্ব দেওয়ায় রিদোয়ানকে পরিকল্পিতভাবে হামলার শিকার হতে হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা হঠাৎ পিছন থেকে আঘাত করে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোজাক্কির রাব্বি বলেন, “আহত রিদোয়ান এখন পর্যন্ত কারও নাম বলতে পারেননি। ছাত্রদলের কেউ জড়িত—এমন প্রমাণও মেলেনি। তবে ঘটনাটি যেই করুক না কেন, আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনুক। ছাত্রদল কখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না।”
অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রসংসদের মুখ্য সংগঠক সুজন মাহমুদ জানান, ‘প্রায় এক মাস আগে কলেজ হোস্টেলে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ওই ঘটনার প্রতিবাদে অনশন কর্মসূচি হয়েছিল, যেখানে রিদোয়ান অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। সেই বিরোধ থেকেই তাঁকে একা পেয়ে হামলা চালানো হয়েছে।’
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেন, ‘মাথা ও বুকে আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় রিদোয়ানকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সিটিস্ক্যান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে এলে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।’
ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ছাত্রদল দীর্ঘদিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই না ক্যাম্পাসে এভাবে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে খেলা হোক। ছাত্ররা পড়াশোনা করবে, রাজনীতির নামে সহিংসতা নয়।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন জানান, ‘আমরা তদন্ত শুরু করেছি। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে মনে করছেন, ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকির মুখে পড়ছেন।