ফেনীতে ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ নিয়ে শহীদ পরিবার, আহতরা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তারা শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানালেও প্রশাসন তাদের মতামত উপেক্ষা করে শহরের প্রান্তে সালাউদ্দিন মোড়ে নির্মাণকাজের উদ্যোগ নিয়েছে।
গত ৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় ২০২৪ সালের আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নবীনচন্দ্র লাইব্রেরির সংলগ্ন স্থান কিংবা পুরাতন জেলা কারাগারের পাশের জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের প্রস্তাব দেন। তবে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় সালাউদ্দিন মোড়ে স্থাপনের।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ পরিবার ও আন্দোলনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে।
বিপ্লবে শহীদ সাইদুল ইসলামের বাবা বলেন, সরকারের উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এটি নবীনচন্দ্র লাইব্রেরির পাশে হওয়ার কথা ছিল। সালাউদ্দিন মোড় মূল শহরের একটু বাইরে পড়ে, তাই বিষয়টি সবার নজরে আসবে না।
শহীদ ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের বাবা বলেন, আমরা মূল শহরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছিলাম। কিন্তু তা উপেক্ষা করে শহরের বাইরের জায়গায় এটি করা হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল আজিজ বলেন, আমরা মতামত দিয়েছিলাম পুরাতন কারাগারের অথবা নবীনচন্দ্র লাইব্রেরির পাশে স্মৃতিস্তম্ভ হবে। এখন বলা হচ্ছে সেটা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয়? কোনো অদৃশ্য শক্তি কি এই সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে?
জেলা জামায়াতের আমীর মুফতি আবদুল হান্নান বলেন, ঢাকার পরে একদিনে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন ফেনীতেই। আমরা চাই স্মৃতিস্তম্ভ এমন জায়গায় হোক, যেখানে মানুষের চোখে পড়বে। শহরের বাইরে হলে তা মর্যাদা হারাবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার জানান, শহীদ পরিবার ও আহতদের মতামত নিয়ে আমরা নবীনচন্দ্র লাইব্রেরির পাশে স্মৃতিস্তম্ভ করার কথা বলেছিলাম। এছাড়াও আরো কয়েকটি স্থান আমরা দেখিয়েছি। তবে এখন শুনছি এটি সালাউদ্দিন মোড়ে হচ্ছে। কেন সেখানে হচ্ছে তা পরিষ্কার নয়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেন জানান, শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ বিষয়ে এখনো কোনো স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সালাউদ্দিন মোড়ে সরকারের খাস জমি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ফেনীতে ছাত্র আন্দোলনের সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে মহিপালে আট শিক্ষার্থীসহ মোট ১১ জন শহীদ হন। সরকারের পক্ষ থেকে স্মৃতিচারণ ও শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।