বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, হারিয়ে যাওয়া এক বীরত্বের ক্রীড়া!

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

লাঠিখেলা বাংলাদেশের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি ক্রীড়া। গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে লাঠিখেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, এটি আত্মরক্ষার একটি কৌশল এবং বীরত্বের প্রতীক। লাঠিখেলার উৎপত্তির কথা নির্দিষ্ট দিন তারিখ ধরে কেউ বলতে না পারলেও এই খেলা যে হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য এ বিষয়ে সব চিন্তার মানুষই একমত হবেন। একসময় বাংলার গ্রামগুলোতে লাঠিখেলা ছিল সাধারণ মানুষের প্রধান ক্রীড়া।

শুরুর দিকে আত্মরক্ষা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য এই খেলা প্রচলিত হয়েছিল। বিশেষ করে জমিদারি শাসনামলে জমিদারদের অধীনে লাঠিয়াল বাহিনী থাকত, যারা জমি, সম্পত্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় লাঠি ব্যবহার করত।

লাঠিখেলার খেলার ঐতিহ্য এবং উদ্ভব সম্পর্কে গবেষক ড. ওয়াকিল আহমদ ‘বাংলার লোকসংস্কৃতি’ গ্রন্থে বলেন, ‘জমিদারগণ যোদ্ধা হিসেবে লাঠিয়াল বাহিনী রাখতেন। যুদ্ধক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা মিটে যাওয়ার পর লাঠি নিয়ে শৌর্য-বীর্য ও কলাকৌশলের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক ও ধর্মীয় আখড়াগুলোতে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বর্তমানে মহরম উপলক্ষে লাঠিখেলা অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত হয়। এদেশে মহরম উৎসব প্রচলিত হওয়ার সময় থেকে এ প্রথা চলে আসছে বলে ধরে নেওয়া যায়।’

লাঠিখেলা সাধারণত খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন উৎসব, মেলা বা পূজার সময়ে লাঠিখেলার আয়োজন করা হতো। খেলোয়াড়রা শক্ত বাঁশের লাঠি ব্যবহার করেন, যা প্রাকৃতিকভাবে শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। খেলাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলগতভাবে পরিচালিত হয়। লাঠিখেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকে অভিজ্ঞ লাঠিয়াল, যারা বিভিন্ন কৌশল এবং কসরত প্রদর্শন করেন। তারা লাঠি ঘুরানো, লাফিয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ এবং প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার নান্দনিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই খেলাকে ঘিরে ঢোল, শঙ্খ, কিংবা অন্যান্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে তৈরি হয় বিশেষ এক আবহ।

সময়ের পরিবর্তনে এবং আধুনিক বিনোদনের প্রভাবে লাঠিখেলা এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি উপেক্ষিত শিল্পে পরিণত হয়েছে। তবে, কিছু গ্রামে এখনো এই খেলাটি দেখা যায়, বিশেষ করে বৈশাখী মেলা বা লোকজ উৎসবে। সরকার এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। লাঠিখেলা কেবলমাত্র বিনোদন নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ। এই খেলাটি গ্রামীণ মানুষের জীবনের সাহস ও সংগ্রামের প্রতীক। সঠিক উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে লাঠিখেলাকে আবারও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।কারন লাঠিখেলা বাংলার মাটির গর্ব। এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আমাদের শিকড়কে মনে করিয়ে দেয় এবং বাঙালির বীরত্বের গল্প বলে। প্রয়োজন এর সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরা। তাহলে হয়তো একদিন লাঠিখেলা আবারও তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

শাহাবাগের বিরুদ্ধে স্লোগানে মধ্যরাতে উত্তাল জাবি

মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এবং শাহবাগে জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচার দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১২ মার্চ) রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের...

নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে এসপি, ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নাটোরে নারী নির্যাতনের মামলায় ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত বরখাস্তকৃত সাবেক পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হককে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে আদালত। আদালত থেকে...

একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন,  জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি নতুন সংবিধান প্রণয়নে আগামী নির্বাচনে একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ...

সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কলেজছাত্র গ্রেপ্তার

ঝালকাঠির রাজাপুরে সহপাঠীকে ধর্ষণ ও গর্ভপাত করানোর অভিযোগে কাজী ফাহাদ (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে রাজাপুর থানায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর...

সম্পর্কিত নিউজ

শাহাবাগের বিরুদ্ধে স্লোগানে মধ্যরাতে উত্তাল জাবি

মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এবং শাহবাগে জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচার দাবিতে মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে...

নারী নির্যাতনের মামলায় কারাগারে এসপি, ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা

নাটোরে নারী নির্যাতনের মামলায় ময়মনসিংহ রেঞ্জে সংযুক্ত বরখাস্তকৃত সাবেক পুলিশ সুপার এসএম ফজলুল হককে...

একই সঙ্গে আইনসভা ও গণপরিষদ নির্বাচন সম্ভব: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন,  জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ বিলোপের পাশাপাশি...
Enable Notifications OK No thanks