রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, হারিয়ে যাওয়া এক বীরত্বের ক্রীড়া!

-বিজ্ঞাপণ-spot_img

লাঠিখেলা বাংলাদেশের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি ক্রীড়া। গ্রামবাংলার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে লাঠিখেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যমই নয়, এটি আত্মরক্ষার একটি কৌশল এবং বীরত্বের প্রতীক। লাঠিখেলার উৎপত্তির কথা নির্দিষ্ট দিন তারিখ ধরে কেউ বলতে না পারলেও এই খেলা যে হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য এ বিষয়ে সব চিন্তার মানুষই একমত হবেন। একসময় বাংলার গ্রামগুলোতে লাঠিখেলা ছিল সাধারণ মানুষের প্রধান ক্রীড়া।

শুরুর দিকে আত্মরক্ষা এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য এই খেলা প্রচলিত হয়েছিল। বিশেষ করে জমিদারি শাসনামলে জমিদারদের অধীনে লাঠিয়াল বাহিনী থাকত, যারা জমি, সম্পত্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় লাঠি ব্যবহার করত।

লাঠিখেলার খেলার ঐতিহ্য এবং উদ্ভব সম্পর্কে গবেষক ড. ওয়াকিল আহমদ ‘বাংলার লোকসংস্কৃতি’ গ্রন্থে বলেন, ‘জমিদারগণ যোদ্ধা হিসেবে লাঠিয়াল বাহিনী রাখতেন। যুদ্ধক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তা মিটে যাওয়ার পর লাঠি নিয়ে শৌর্য-বীর্য ও কলাকৌশলের ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় সামাজিক ও ধর্মীয় আখড়াগুলোতে, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বর্তমানে মহরম উপলক্ষে লাঠিখেলা অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত হয়। এদেশে মহরম উৎসব প্রচলিত হওয়ার সময় থেকে এ প্রথা চলে আসছে বলে ধরে নেওয়া যায়।’

লাঠিখেলা সাধারণত খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন উৎসব, মেলা বা পূজার সময়ে লাঠিখেলার আয়োজন করা হতো। খেলোয়াড়রা শক্ত বাঁশের লাঠি ব্যবহার করেন, যা প্রাকৃতিকভাবে শক্ত এবং দীর্ঘস্থায়ী। খেলাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দলগতভাবে পরিচালিত হয়। লাঠিখেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থাকে অভিজ্ঞ লাঠিয়াল, যারা বিভিন্ন কৌশল এবং কসরত প্রদর্শন করেন। তারা লাঠি ঘুরানো, লাফিয়ে আক্রমণ প্রতিরোধ এবং প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করার নান্দনিক দক্ষতা প্রদর্শন করেন। গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া এই খেলাকে ঘিরে ঢোল, শঙ্খ, কিংবা অন্যান্য দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে তৈরি হয় বিশেষ এক আবহ।

সময়ের পরিবর্তনে এবং আধুনিক বিনোদনের প্রভাবে লাঠিখেলা এখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে এটি একটি উপেক্ষিত শিল্পে পরিণত হয়েছে। তবে, কিছু গ্রামে এখনো এই খেলাটি দেখা যায়, বিশেষ করে বৈশাখী মেলা বা লোকজ উৎসবে। সরকার এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। লাঠিখেলা কেবলমাত্র বিনোদন নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অংশ। এই খেলাটি গ্রামীণ মানুষের জীবনের সাহস ও সংগ্রামের প্রতীক। সঠিক উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে লাঠিখেলাকে আবারও জনপ্রিয় করে তোলা সম্ভব।কারন লাঠিখেলা বাংলার মাটির গর্ব। এই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আমাদের শিকড়কে মনে করিয়ে দেয় এবং বাঙালির বীরত্বের গল্প বলে। প্রয়োজন এর সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরা। তাহলে হয়তো একদিন লাঠিখেলা আবারও তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

আবু সাঈদ-মুগ্ধরা স্থানীয় নির্বাচনের জন্য রক্ত দেননি: ডা. জাহিদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ বা ওয়াসিমরা রক্ত দিয়েছে বা চৌধুরী আলম অথবা ইলিয়াস আলীরা...

আমাদের চাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাওয়া, এটি দলীয় এজেন্ডা। আর এটাকে ষড়যন্ত্র...

সংসারে নতুন অতিথি, চতুর্থবারের মতো বাবা হলেন নেইমার

সংসারে নতুন অতিথি আসছে, এ খবরটা গত বছর জানুয়ারিতেই দিয়েছিলেন নেইমার-ব্রুনা বিয়ানকার্দি জুটি। এরপর থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা ফুটবলারের ভক্ত-অনুসারীরা। সেই অপেক্ষা...

৩য় ওয়ানডেতে অনিশ্চিত শান্ত

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয় তুলে নিয়ে সিরিজে সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ। যা বাংলাদেশের জন্য ৭ ম্যাচ পর প্রথম জয়। তবে ম্যাচ জিতলেও চিন্তার বিষয়...

সম্পর্কিত নিউজ

আবু সাঈদ-মুগ্ধরা স্থানীয় নির্বাচনের জন্য রক্ত দেননি: ডা. জাহিদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আবু সাঈদ, মুগ্ধ...

আমাদের চাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন: তাহের

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে...

সংসারে নতুন অতিথি, চতুর্থবারের মতো বাবা হলেন নেইমার

সংসারে নতুন অতিথি আসছে, এ খবরটা গত বছর জানুয়ারিতেই দিয়েছিলেন নেইমার-ব্রুনা বিয়ানকার্দি জুটি। এরপর...