কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: চার দশকের দীর্ঘ ও জটিল আইনি লড়াই শেষে ন্যায়বিচার পেলেন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র। দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ তার পক্ষে রায় দিয়ে তাকে মামলা পরিচালনার খরচ হিসেবে ২০ লাখ টাকা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে এই নির্দেশ দেন। এর ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলকভাবে আগামী তিন মাসের মধ্যে হরেন্দ্রনাথকে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
১৯৭৯ সালে বিএ পাস করে ঢাকার সোনালী ব্যাংকের একটি শাখায় ক্যাশিয়ার-কাম-ক্লার্ক পদে যোগ দেন হরেন্দ্রনাথ। পরবর্তীতে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি হন তিনি। ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে অভিযোগ ওঠে, ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার একটি রেমিট্যান্স তহবিলের গরমিল রয়েছে। সেই অভিযোগে হরেন্দ্রনাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা হয়।
একটি মামলায় তিনি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হন এবং জেলও খাটেন। তবে পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর করা মামলায় ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর হরেন্দ্রনাথসহ সবাই বেকসুর খালাস পান।
তবে এখানেই শেষ নয়। ১৯৮৮ সালে সোনালী ব্যাংক পুনরায় অর্থঋণ আদালতে একতরফা মামলা করে। সেই মামলার একতরফা রায় বাতিল করতে গিয়ে হরেন্দ্রনাথকে পড়তে হয় দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার মুখে।
২০১৯ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করলে ২০২২ সালে তা খারিজ হয়। এরপর তারা আপিল বিভাগের শরণাপন্ন হলে ২০২৪ সালে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে চূড়ান্ত রায় দেন আদালত।
পুরো বিষয়টি নিয়ে হরেন্দ্রনাথ কোন বক্তব্য দিতে চাননি। তবে হরেন্দ্রনাথের আইনজীবী ব্যারিস্টার ওমর ফারুক জানান, “আদালত স্পষ্টভাবে বলেছেন— সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হরেন্দ্রনাথকে ২০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য।” এই রায় বাস্তবায়নের জন্য আর কোনো আইনি জটিলতা নেই।
জীবনের অর্ধেক সময় আইনি লড়াইয়ে কাটিয়ে ৭০ পেরোনো বৃদ্ধ হরেন্দ্রনাথ এখন কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। দীর্ঘ যন্ত্রণার পর ন্যায়বিচার পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন দেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি।