বাংলাদেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানো, বিরোধী দলের প্রার্থীদের এজেন্ট এবং ভোটারদের ভয় দেখানোসহ নানা অনিয়মের খবরে পর্যবেক্ষকেরা এ ধারণা করেন।
গতকাল সোমবার (২০ মার্চ) ‘২০২২ কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে আসে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বেআইনি বা নির্বিচারে হত্যা, গুম, নির্যাতন, কারাগারের অবস্থা, নির্বিচারে গ্রেফতার বা আটক, রাজনৈতিক বন্দি, কোনো ব্যক্তির অপরাধের জন্য পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, সাংবাদিকদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেফতার বা বিচার, মতপ্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকর, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং মিডিয়ার ওপর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা; শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয় সরকার পদ্ধতির কথা রয়েছে; যেখানে অধিকাংশ ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তার দল পাঁচ বছর মেয়াদে টানা তৃতীয়বারের মতো জয়ী হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকেন শেখ হাসিনা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের বিরুদ্ধে বহু নির্যাতনের ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নির্যাতন ও দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যাপকভাবে দায়মুক্তি দেয়ার অনেক খবর রয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন বা দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করা, ঘটনার তদন্ত করা, তাদের বিচার ও সাজা প্রদানে হাতে গোনা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রকাশিত এই প্রতিবেদন নিয়ে এক বিবৃতিতে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘ব্যক্তির অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন একটি অধিকতর নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বিশ্ব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। (মানুষের) মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা করার মধ্য দিয়ে দেশ হিসেবে আমাদের পরিচিতির মূল দিকটি ফুটে উঠে।’
বিগত প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশ ও অঞ্চলভিত্তিক এই প্রতিবেদনে কোনো আইনি সিদ্ধান্ত দেয়া হয় না কিংবা মানবাধিকার পরিস্থিতির ভিত্তিতে প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কোনো ক্রমতালিকা বা তুলনা করা হয় না।