একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি আজকের মতো মুলতবি করা হয়েছে। শুনানি আগামীকাল, বুধবার, আবার অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের আপিল বেঞ্চ রিভিউ আবেদনের আংশিক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। আদালত জানিয়েছে, আগামীকাল এই শুনানি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় শীর্ষে থাকবে।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আজহারুল ইসলামের খালাসের পক্ষে ১৪টি যুক্তি প্রদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি যুক্তি আজকের শুনানিতে পড়া হয়েছে, বাকি যুক্তিগুলো আগামীকাল পড়া হবে।
রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে আদালত যদি আবেদন গ্রহণ করে, তবে আজহারুল ইসলামের খালাস হতে পারে। আর যদি আবেদন খারিজ করা হয়, তবে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকতে পারে, তবে সাজা কমিয়ে অন্য কোন দণ্ডও দেওয়া হতে পারে। সবকিছু আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম গত এক যুগ ধরে ফাঁসির সাজা নিয়ে কারাবন্দী আছেন। জামায়াত সরকার পতনের পর থেকেই তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি, দলটি দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় এবং পল্টনে এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থেকে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় আজহারের মুক্তির জন্য। এই পরিস্থিতিতে তার রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসে। জামায়াতের নেতাকর্মীরা আশা করেছিলেন যে, আজহার জামিনে মুক্ত হবেন। তবে শুনানি মুলতবি হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে পড়ে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজের ফেসবুক পেইজে আজহারের মুক্তি দাবি করে স্বেচ্ছায় কারাবরণের হুঁশিয়ারি দেন এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তবে শেষ মুহূর্তে সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর, মানবতাবিরোধী অপরাধে এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এ রায়টি দেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। এরপর আজহারুল ইসলাম এই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে রংপুর অঞ্চলে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়। এর মধ্যে ১২৫৬ ব্যক্তিকে গণহত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক এবং নির্যাতন ও গুরুতর জখমের মতো অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগে পাঁচটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যদিও জামায়াতে ইসলামী এই রায়কে প্রহসন বলে দাবি করেছে।
২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জামায়াত নেতা আজহারের বিরুদ্ধে ১১৩টি যুক্তি উপস্থাপন করে তার আইনজীবীরা খালাস চেয়ে আপিল করেন।