দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকা তাড়িয়ে ফিরছে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারকে। এ বছর দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস ঘোষণা করায় কিছুটা স্বস্তিতে স্বজনরা। তাদের আশা, এতদিন ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন না হলেও এবার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরবে তদন্ত কমিশন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ কর্নেল মুজিবুল হকের স্ত্রী নেহরীন ফেরদৌসী তার পুরানো অ্যালবামে স্বামীর সঙ্গে কাটানো স্বর্ণালী সব মুহূর্তগুলোর ফ্রেমবন্দি ছবি দেখিয়ে বলেন, সেই দিনের বিভীষিকাময় দিনের কথা। কিন্তু চোখের সামনে স্বামীর নির্মম হত্যার দৃশ্য ভেসে উঠতেই ম্লান হয়ে যায় সবকিছু তার।
নেহরীন ফেরদৌসী বলেন, উচ্ছৃঙ্খল জওয়ানদের থামাতে ব্যারাকে গিয়েছিলেন তৎকালীন ঢাকা সেক্টর কমান্ডার মুজিব। ব্রাশফায়ারে হত্যা করে তিনতলা থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয় তাকে।
আরেক শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেনের র্যাবে পোস্টিং ছিল তার। বিডিআরে থাকতে বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক আনতে গিয়েছিলেন পিলখানায়। আর ফেরা হয়নি তার বলে জানান তার স্ত্রী কোহিনূর হোসেন।
উত্তেজিত জওয়ানদের রুখতে একাই ছুটে যান বিডিআরের সুবেদার মেজর নুরুল ইসলাম। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও চালিয়ে যান লড়াই। তার বীরত্বের জন্য রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করার দাবি জানান ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান।
শহীদ সেনা পরিবারের জন্য স্বস্তির হয়ে এসেছে এ বছর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা।
শহীদ সেনা অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটির সদ্স্য কোহিনূর হোসেনের প্রত্যাশা, পিলখানা ট্র্যাজেডির রহস্য উন্মোচন করবে এ কমিশন।
কোনো চাপের মুখে এবার যেন আর ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হতে হয় তাদের, সংশ্লিষ্টদের প্রতি সে আহ্বান শহীদ সেনা পরিবারের।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পিলখানার দরবার হলে টানা ৩৩ ঘণ্টা ধরে চলে হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকা।
উল্লেখ্য, ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। দিবসটি ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত হবে। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এ দিবস ঘোষণা করা হয়। উপসচিব তানিয়া আফরোজ ওই পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। পরিপত্রে বলা হয়েছে, সরকার প্রতিবছর ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং তবে সরকারি ছুটি ব্যতীত জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের জন্য ‘গ’ শ্রেণীভুক্ত দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ওই সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানা হত্যাকাণ্ডে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের মাধ্যমে সেনা সদস্যদের আত্মত্যাগকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয়া হলো।