বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ, ২০২৫

টকশোতে শিক্ষার্থীকে ‘রাজাকার-আলবদরের ছেলে’ বললেন বিএনপি নেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

ফেস দ্যা পিপলের টকশোতে এক শিক্ষার্থীকে ‘রাজাকারের ছেলে’ ‘আলবদরের ছেলে’ বলার প্রতিবাদে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা।

গত মঙ্গরবার (৪ মার্চ) রাতে ফেস দ্যা পিপলের নিয়মিত টকশোর দর্শকপর্বে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একজন শিক্ষার্থী যুক্ত হন। দর্শক হিসেবে যুক্ত হওয়া মিরাজ উদ্দীন বলেন, বিএনপির নেতারাও সাবেক ক্ষমতাসীনদের মতো আচরণ করছেন। এ সময় তার এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে ফজলুর রহমান ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। পরে তার কথার জবাবে মিরাজ উদ্দীন বলেন, ‘বিএনপি গত ১৬ বছরে একটা বালুর ট্রাক সরাইতে পারে নাই, আর এখন তারা এসে নির্বাচন নির্বাচন করে।’

ওই শিক্ষার্থীর কথা শুনে, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট ফজুলর রহমান মিরাজকে ‘রাজাকারের ছেলে’ ‘আলবদরের ছেলে’ বলে সম্বোধন করেন। তার ওই বক্তব্যের ক্লিপটি তাৎক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

পরে, বুধবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সভা করেন বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতা। একপর্যায়ে ফজলুর রহমানের কুশপুত্তলিকা পোড়ান বিক্ষোভকারীরা। এ সময়, অবিলম্বে ফজলুর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের সাবেক এই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান বিক্ষুব্ধরা।

বিক্ষোভকারীরা বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ছাত্রদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছেন, ফজলুর রহমানও তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। জুলাই গণহত্যার রক্ত মুছতে না মুছতেই ফের ‘রাজাকারের ছেলে’ সম্বোধন করে ছাত্রদেরকে নতুন করে আতঙ্কিত করছে।

বিক্ষোভকালে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান বলেন, আজকে আমরা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন জ্বালাচ্ছি, এর কারণ হলো— ৫ আগস্টের পরে আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তিনি তা মানতে পারেননি। তিনি যেখানে সেখানে বিপ্লবীদেরকে যা মন চায় তা বলে কটাক্ষ করছেন। তিনি ফ্যাসিবাদের সুরে কথা বলছেন। সর্বশেষ তিনি ফেস দ্যা পিপলের টকশোতে একজন ছাত্র প্রতিনিধিকে রাজাকারের ছেলে বলেছেন। যেখানে শেখ হাসিনা এই রাজাকারের বাচ্চা বলে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

এ সময় তিনি আরও বলেন, আমরা ফজলুর রহমানসহ সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন করে কোনো তরুণকে, কোনো ছাত্রকে রাজাকারের সন্তান বললে— তা বরদাস্ত করা হবে না। নব্যফ্যাসিবাদীদের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।

এদিকে, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ সরকারের কাছে অবিলম্বে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একজন ছাত্রকে ‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ফজুলর রহমানকে সমগ্র ছাত্র সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা ফজলুর রহমানের ঘাড়ে চেপেছে। তা নাহলে ৫ আগস্টের পর তার দুঃসাহস হতো না আমাদের ছাত্র ভাইকে রাজাকারের ছেলে সম্বোধন করার।

এ সময় কর্মসূচিতে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার ও আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সদস্য তামিম আনোয়ার, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব ইসতিয়াক আহমদ ইফাত, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান ও বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আহবায়ক মো. আরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ফজলুর রহমান এক সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ জেলার মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন। পাশাপাশি, তিনি বর্তমানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৩ আসন থেকে এবং ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন।

২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তবে পরাজিত হন। এরপর তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

চারদলীয় জোট সরকারের শেষের দিকে ফজলুর রহমান বিএনপিতে যোগ দেন এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হন। ২০০৮ সালের নবম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচন করেন, কিন্তু দু’বারই পরাজিত হন।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

ব্রিজের রড চুরির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন বিএনপির তিন নেতা

পিরোজপুরের নাজিরপুরে ব্রিজের ছাউনি ভেঙে রড চুরির অভিযোগে তিন নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কার করেছেন জেলা বিএনপি। বুধবার রাতে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব গাজী অহিদুজ্জামান লাভলু...

৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছেন। এর মধ্যে সাত জনের নাম জানা গেছে। বাকি...

আবরারের স্বাধীনতা পুরস্কারকে ‘বানরের গলায় মুক্তার মালা’ বললেন আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদকবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০২৫ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০১৯ সালে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত...

আবরার ফাহাদ আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রামের চেইন : উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, আবরার ফাহাদ শুধু একটি নাম নয়, আবরার ফাহাদ হচ্ছেন আগ্রাসন বিরোধী সংগ্রামের চেইন। তার...

সম্পর্কিত নিউজ

ব্রিজের রড চুরির অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন বিএনপির তিন নেতা

পিরোজপুরের নাজিরপুরে ব্রিজের ছাউনি ভেঙে রড চুরির অভিযোগে তিন নেতাকে দলীয় পদ থেকে বহিস্কার...

৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি পাচ্ছেন স্বাধীনতা পুরস্কার

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০২৫ সালের স্বাধীনতা...

আবরারের স্বাধীনতা পুরস্কারকে ‘বানরের গলায় মুক্তার মালা’ বললেন আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক

নিজস্ব প্রতিবেদকবাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ২০২৫ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার...
Enable Notifications OK No thanks