চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা ও দুই পৌরসভার কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৬ মার্চ) বারইয়ারহাট পৌর বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটে। এ সময় মো. জাবেদ (৪৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরও ৩০ জন। নিহত ও আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নিহত জাবেদ চট্টগ্রামের বায়োজিদ থানার বাংলাবাজারের নীলগিরি আবাসিক এলাকার জাহাঙ্গীর ও জাহিদা বেগমের ছেলে। তিনি আরএফএল গ্রুপের এসআর (মার্কেটিং অফিসার) হিসেবে কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহত সুমন (৩৫) ফজলুল করিম (৪৩), জাহেদুল ইসলাম (৪২), শহিদুল ইসলাম (৫১), ওমর ফারুক (৩৫), দিদার (৩৭), আবু সুফিয়ান (৪০), ফাহিম (২২), এরশাদ (৪০), গোলাম মোর্শেদ (৪০), রাশেদ (৫০), দিদারুল আলম চৌধুরী (৪০), ইলিয়াসকে (৫০) প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আহত সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের সবাই ধারালো চুরিতে জখমপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। সংঘর্ষে আহত ছয় জন বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে ও বারইয়ারহাট মেডিক্যাল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
জানা গেছে, গত ২৪ মার্চ চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার মীরসরাই উপজেলা, মীরসরাই পৌরসভা ও বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। কমিটি ঘোষণার পরপর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের সমর্থিত পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) কমিটি বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, ঝাড়ু মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপির চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের গ্রুপের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। উল্লেখিত এলাকায় কোনও ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বহনসহ একত্রে পাঁচ জন বা তার বেশী লোকজন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
তবে বুধবার দুপুর ১২টায় নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নেতাকর্মী ফুল দিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় দলীয় বিভিন্ন স্লোগান দেন। পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে মিছিলসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা সদর ত্যাগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা লক্ষ্য করা যায়নি। বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, বুধবার সকাল ১০টায় বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে আমাদের নেতাকর্মীদের পথ অবরুদ্ধ করে হামলা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বেলা ১২টায় আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিলসহকারে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে প্রবেশ করলে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ সময় জাবেদ নামে এক পথচারী তাদের হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৯ জন।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী বলেন, বুধবার বেলা ১১টায় পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটনের বাড়ির সামনে বিএনপি নেতা মোজাম্মেল হোসেনসহ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী ও মাঈন উদ্দিন লিটনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। স্বাধীনতা দিবসে বারইয়ারহাট ডিগ্রি কলেজের শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য আমরা নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান করছিলাম। শান্তিরহাট রোডের মুখে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় জাবেদ নামে এক পথচারী নিহত হন। সংঘর্ষে যুবদল ও ছাত্রদলের সুমন, বাবুল, মিজান, নুর উদ্দিন, আরিফসহ ৮-১০ জন আহত হয়েছেন।
বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মাঈন উদ্দিন লিটন বলেন, বুধবার সকালে দিদারুল আলম মিয়াজীর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। এ সময় ১০-১৫ জন আহত হন। হামলার পর দুপুরে তারা আমাদের বাড়িতে গিয়েও ভাঙচুর চালায়। বুধবার বিকাল পর্যন্ত বারইয়ারহাট পৌরবাজারে তারা সশস্ত্র অবস্থানে ছিল।
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাজিয়া আফরিন বলেন, জাবেদ নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। এ সময় ১০-১২ জনকে আহত অবস্থায় আনা হয়। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারির মতো কোনও পরিস্থিতি আজ ছিল না। প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে সেটি বোধগম্য নয়।
জোরারগঞ্জ থানার ওসি সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত দুই দিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। বুধবার সকালে বারইয়ারহাট পৌরবাজারে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় জাবেদ নামে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হন আরও ৮-১০ জন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ দুপুর ১২টায় বিএনপির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রবেশ করেছে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোরারগঞ্জ থানার ওসিকে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে।