ঈদকে সামনে রেখে সবাই ছুটছে বাড়ির দিকে। একটাই লক্ষ, পরিবার নিয়ে ঈদ করা। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে পরিবারের সাথে ছুটি কাটালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার ও নিরাপত্তাকর্মীরা রয়ে যান ক্যাম্পাসেই।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তা কর্মীদের ২২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব এবং ৪৯ জনের আনসার সদস্যদের দল আউটসোর্সিংয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এরমধ্যে ঈদের ছুটি পেয়েছেন মাত্র ৮ জন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন সদস্যের কেউ ঈদ উপলক্ষে কোন ছুটি পায়নি। নিয়ম মাফিক সপ্তাহে একদিনের ছুটি ভোগ করবে।
নিরাপত্তার দায়িত্বরত একজন নিরাপত্তাকর্মী জামাল উদ্দিন বলেন, ‘ কিছু করার নাই মামা মেনে নিতে হয়। এখন যদি আমি বিদেশে থাকতাম, তাহলে তো কয়েক বছর আসতে পারতাম না। যদি দরকার হয় তাহলে বাধ্যতামূলক আমাকে ছুটি নিতে হবে। যেমন কিছুদিন আগে আমার ছেলে হয়েছিলো মারা গিয়েছে । সেই ঘটনা তে যাওয়া তে ঈদের ছুটি পেলাম না। এবার সাদেক স্যার প্রসাশন থেকে ২৭০ টাকা করে দিয়েছে, সেমাই-চিনি কিনে খাওয়ার জন্য। এর আগে নাকি কখনো দেয় নি। ভার্সিটির প্রধান নাকি বলেছে, সবাই কে কিছু না কিছু দেওয়া হয়েছে ওদের না দিলে কেমন দেখায়। একবেলা খাওয়ার ব্যবস্থা হলো আর কি। অনেক সময় মামারা (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী) সেহেরি বা ইফতার দিয়ে গেছে। সবসময় যে পাই তা না। যাদের ডিউটি পরে তারা পায়। আমি দুই দিন সেহরি পেয়েছি। গতকাল যখন গেইটে ডিউটিতে ছিলাম, তখন সম্ভবত ছাত্র হবে। সেমাই চিনির প্যাকেট দিয়েছিল।’
অন্য এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, ছেলেমেয়েরা ফোন করে জানতে চায়, ‘বাবা তুমি কখন আসবে?’ কিন্তু তাদের বুঝতে দিতে চাই না যে আমি যেতে পারব না। শুধু বলি, ‘দায়িত্ব শেষ হলেই যাব।’ যদিও জানি, সেটা সম্ভব হবে না।
ক্যাম্পাসের ফাঁকা সড়ক, নিস্তব্ধ হল প্রাঙ্গণ, নীরব একাডেমিক ভবন—এসবের মাঝেই কাটে তাদের ঈদ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত কিছু বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়, তবে সেটাই তাদের জন্য একমাত্র উৎসব।
একজন সিনিয়র নিরাপত্তাকর্মী জানান, ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ি, তারপর ডিউটিতে বসে থাকি। সহকর্মীদের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়ার সময়টা একটু ভালো লাগে, তবে পরিবারের শূন্যতা ঠিকই অনুভব করি। ঈদ মানে আনন্দ। কিন্তু কিছু মানুষ সেই আনন্দ থেকে দূরে থাকেন, যেন অন্যদের স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের ঈদ তাই একরকম দায়িত্ববোধের ইদ, যেখানে ব্যক্তিগত সুখকে ছাপিয়ে যায় কর্তব্য।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যখন নিশ্চিন্তে ফিরে আসেন ছুটি কাটিয়ে, তখন তারা বুঝতেও পারেন না, এই ক’দিন ক্যাম্পাসের দায়িত্বে কারা ছিলেন।