ভারত সরকারের খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডা যে অভিযোগ তুলেছে, তাকে ‘গুরুতর’ বলেই অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে ভারতের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করে ওয়াশিংটন।
মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের কো-অর্ডিনেটর জন কিরবি এমন কথা বলেছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কিরবি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, খালিস্তানপন্থি নেতার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার বিষয়ে কানাডার তোলা অভিযোগ ‘গুরুতর’ এবং এটি পরিপূর্ণভাবে তদন্ত করা দরকার।
গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি শিখ মন্দিরের বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় ৪৫ বছর বয়সী হরদীপ সিং নিজ্জারকে। তিনি ছিলেন শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা এবং কানাডিয়ান নাগরিক।
এ প্রেক্ষিতে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ তুলেন হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় সরকারের এজেন্টদের ভূমিকা ছিল। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা শিখ নেতা নিজ্জারের হত্যার সাথে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ খুঁজে পেয়েছে।
ট্রুডোর এমন অভিযোগের পর ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। যদিও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ বলে নাকচ করে দিয়েছে ভারত। নিহত নিজ্জার নয়াদিল্লির চোখে ‘সন্ত্রাসী’ ছিল।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে, হোয়াইট হাউসে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের স্ট্র্যাটেজিক কমিউনিকেশনের সমন্বয়ক জন কিরবি বলেন, গত সপ্তাহে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ওয়াশিংটনে বৈঠক করেছেন এবং সেসময় তাদের মধ্যে কানাডার তোলা অভিযোগগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা অবশ্যই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলার জন্য এই দুটি দেশের ওপর ছেড়ে দেব।’
কিরবি আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট বলেছি, এই অভিযোগগুলো গুরুতর। এসব অভিযোগের সম্পূর্ণরূপে তদন্ত হওয়া দরকার এবং অবশ্যই, যেমন আমরা আগেই বলেছি, আমরা ভারতকে সেই তদন্তে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
পৃথক এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেছেন, কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত রাখা এবং অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা আগেও প্রকাশ্যে এবং ব্যক্তিগতভাবে বলেছি, (শিখ নেতাকে হত্যার ঘটনায়) কানাডার তদন্তে সহযোগিতা করতে এবং সেই প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছি।’
বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘কোয়াড এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে ভারত আমাদের অংশীদার এবং আমরা তাদের ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
‘কিন্তু আমি যেমন বলেছি, আমরা এই অভিযোগগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং আমরা কেবল কানাডার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি না বরং কানাডাকে সহযোগিতা করার জন্য ভারত সরকারকে প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছি,’ বলেন প্যাটেল।
চলমান উত্তেজনার মাঝেই পরিস্থিতি আরও উতপ্ত করেছে ভারত। শিখ নেতা হত্যার ইস্যুতে ভারত সরকার আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে কানাডাকে ৪১ কূটনীতিক সরিয়ে নিতে বলেছে।