ফিলিস্তিনের গাজায় দখলদার ইসরায়েল বাহিনীর নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে ‘গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজা’ কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ক্লাস বর্জন করলে শিক্ষার্থীদের ডাবল অ্যাবসেন্ট দেওয়ার হুমকি দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) এক শিক্ষক। এবার সেই শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র এবং এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু এ তথ্য জানিয়েছেন।
অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান রাজু বলেন, তাহমিনা রহমানকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে প্রাথমিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে তাকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হবে।
তাহমিনা রহমান বিশ্ববিদ্যালয়টির জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক ছিলেন।
জানা যায়, ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের চলমান নৃশংস গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এবং মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ কর্মসূচি পালন করতে সোমবার ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নেন ড্যাফোডিলের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি জানার পর প্রভাষক তাহমিনা শিক্ষার্থীদের গ্রুপে জানান, ক্লাসে না আসলে ডাবল অ্যাবসেন্ট দেওয়া হবে। এ সংক্রান্ত একটি কথপোকথনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
যদিও তাহমিনা রহমান রোববার দিনগত মধ্যরাতে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেন।
সেই পোস্টে তাহমিনা রহমান লিখেছেন, ‘My Sincere Apology, আমি সাম্প্রতিক ঘটনাটি নিয়ে কিছু বলতে চাই, যা ৭ এপ্রিল, ২০২৫-এ গ্লোবাল স্ট্রাইক ফর গাজাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে। প্রথমেই বলতে চাই, আমার কথার ভুল বোঝাবুঝির কারণে যে গভীর কষ্ট ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন । আমি কখনোই ফিলিস্তিন ও গাজার মজলুম মুসলিমের উপর নিকৃষ্ট ইসরাইলের ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞ সমর্থন করিনি, এখনো করিনা, কখনোই করবো না।
যে স্ক্রিনশটগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমার প্রকৃত মনোভাবকে প্রতিফলিত করে না। এখানে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, এবং আমার কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমি নিঃসন্দেহে গাজা ও তার জনগণের পাশে আছি, তাদের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতার দাবিকে কঠোরভাবে ও গভীরভাবে সমর্থন করি। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের হত্যার জন্য আমি ইসরাইলের করুণ ধংস চাই, মনে প্রাণে চাই, আল্লাহর কাছে চাই।যেহেতু আমার ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথোপকথনটি ছিলো কিছুটা বিকালের দিকের, আমি সারাদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ না থাকার জন্য আমি বুঝতে পারিনি এটি পুরো বিশ্বের ও বাংলাদেশের স্টুডেন্টদের একটি কালেক্টিভ প্রটেস্ট। আমি নিতান্তই আমার নিজ ব্যাচ এর সেকশনের কিছু শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত ভেবেছিলাম তাই আমার প্রতিক্রিয়া এরূপ ছিলো। তবে সেটা হলেও আমার এইরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হয়নি। এই কারণে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থী।
আমার শিক্ষার্থী, সহকর্মী, বন্ধু এবং এই ঘটনার দ্বারা যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আপনারা সবাই আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।’
তবে তীব্র সমালোচনার মুখে কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেছে।