গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে আগের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয়তা দেখিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এবং কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি এই অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। যদিও পুরোপুরি সমঝোতায় পৌঁছাতে এখনও বেশ কিছু জটিলতা রয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে ১৮ মার্চ সেই চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে কয়েকশ মানুষ নিহত হন। এরপর থেকেই নতুন করে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কাতার ও মিসর।
দীর্ঘদিন ধরে হামাসের কাছে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির শর্তে যুদ্ধবিরতিতে রাজি ছিল ইসরায়েল। শুরুতে তারা ১১ জন জীবিত জিম্মির মুক্তি চাইলেও সম্প্রতি সেই সংখ্যা কমিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে মিসরের কাছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতি শুরুর প্রথম দুই সপ্তাহের মধ্যেই জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানালেও হামাস ধাপে ধাপে জিম্মি মুক্তির পক্ষে।
এদিকে হামাসের পক্ষ থেকে আটজন জীবিত জিম্মির মুক্তি এবং জিম্মি বিনিময়ের অংশ হিসেবে কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি চাওয়া হয়েছে। তবে ইসরায়েল পাল্টা প্রস্তাবে একজন জিম্মির বিনিময়ে কেবল একজন যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে চায়।
ইসরায়েল নতুন প্রস্তাবে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে গাজা উপত্যকা থেকে তাদের সেনা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়া হবে—বিশেষ করে গাজার কেন্দ্রীয় অংশগুলো থেকে। একইসঙ্গে, অবরোধ শিথিল করে মানবিক সহায়তা প্রবেশের পথও খুলে দেওয়া হবে।
এছাড়া ১৬ জন মৃত জিম্মির মরদেহ ফেরত চেয়ে হামাস যে দাবি জানিয়েছে, তা নিয়েও আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছে ইসরায়েল।
মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে শুরুতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাজি না হলেও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের পর তার অবস্থানে পরিবর্তন আসে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে ওই বৈঠকের পরই নতুন প্রস্তাব পাঠায় ইসরায়েল।
হামাস শুরু থেকেই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির পক্ষে থাকলেও জানুয়ারির চুক্তি ভঙ্গের কারণে তারা এবার ইসরায়েলের মৌখিক প্রতিশ্রুতিকে যথেষ্ট মনে করছে না। গাজায় ১৮ মার্চের ভয়াবহ হামলার পর থেকে হামাস তাদের অবস্থানে আরও সতর্ক হয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চূড়ান্ত কোনো সমঝোতার আগে তারা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে লিখিত নিশ্চয়তা চায়।
মিসরের রাজধানী কায়রোতে আজ শনিবার রাতে যাচ্ছেন হামাস নেতা খলিল আল-হায়া ও তার প্রতিনিধিদল। মিসরীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই তারা ইসরায়েলের প্রস্তাব হাতে পাবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন, হামাস এখনই ইসরায়েলের বেশিরভাগ শর্ত মানবে না। ফলে খুব শিগগিরই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা কম। তবে আলোচনায় কিছু অগ্রগতি হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের পারস্পরিক আস্থার বড় সংকট রয়ে গেছে।
এর আগে জানুয়ারিতে প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর হামাস দ্বিতীয় ধাপে যেতে বললেও ইসরায়েল তা না মেনে সরাসরি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় হামলা শুরু করে। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতেই এবার হামাস বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রও এবার আলোচনার ক্ষেত্রে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকোফ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনে প্রেসিডেন্ট নিজেই ঘোষণা দেবেন যে ইসরায়েল স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।
সবমিলিয়ে, দীর্ঘদিন ধরে চলা গাজা সংকটের অবসানে নতুন আলোচনার সুযোগ তৈরি হলেও, বাস্তব অগ্রগতি পেতে হলে উভয় পক্ষের আরও বড় ধরনের ছাড় এবং আন্তর্জাতিক চাপের প্রয়োজন রয়েছে। সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল