নাটোরের গুরুদাসপুরে শিধুলী হাটের আয় নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও একটি মাদ্রাসা কমিটির মধ্যে বিরোধের জেরে মাদ্রাসা কমিটির ৮ জনকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে।
এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকাবাসী ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা।
সমাবেশে অংশ নেয় মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র, স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষ, হেফাজতে ইসলাম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ওলামা পরিষদের নেতাকর্মীরা। তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মো. রুবেল হাসান একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। সেই মামলার ভিত্তিতে মঙ্গলবার দুপুরে যৌথবাহিনী ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের দাবি, শিধুলী হাট সরকারি তালিকাভুক্ত নয়। দীর্ঘদিন ধরে হাটের আয় শিধুলী পোয়ালশুড়া হযরত ওসমান (র.) এতিমখানা হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসায় জমা পড়ে। এই টাকায় চলে মাদ্রাসার প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থীর—মধ্যে ৮০ জন এতিম—খাদ্য, আবাসন ও ধর্মীয় শিক্ষা।
তবে সম্প্রতি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল আজিজের অনুসারীরা হাটের আয়ের ভাগ দাবি করলে মাদ্রাসা কমিটির সঙ্গে তাদের বিরোধ শুরু হয়।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাট থেকে টাকা উত্তোলন বন্ধের পরামর্শ দেন। মাদ্রাসা কমিটি সেই নির্দেশনা মেনে টাকা উত্তোলন বন্ধ করলেও পরে অভিযোগের ভিত্তিতে সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেনসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা ফাতিহুল কবীর বলেন, “আমরা প্রশাসনের নির্দেশ মেনেই চলেছি। তারপরও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে আমাদের লোকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
সমাবেশে বক্তারা বলেন, হাটের টাকা নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দল ভাগ চায়—এটা খুবই দুঃখজনক। তারা অভিযুক্তদের মুক্তি এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
তবে সাবেক উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল আজিজের ছেলে সোহাগ মাহমুদ দাবি করেন, “বিএনপির সঙ্গে মাদ্রাসা কমিটির কোনো দ্বন্দ্ব নেই। হাটের টাকা তোলার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসায় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগপন্থী হওয়ায় বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ দেয়া হচ্ছে।”
মামলার বাদী ছাত্রদলের সভাপতি রুবেল হাসান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি হাট থেকে টাকা তোলা বন্ধ করেছিলেন। কিন্তু মাদ্রাসা কমিটি তা মানেনি। তাই তিনি মামলা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ বলেন, “শিধুলী হাট সরকারি তালিকাভুক্ত নয়। টাকা উত্তোলনের খবর পেয়ে আমি মাদ্রাসা কমিটিকে নিষেধ করেছিলাম।”
গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, “সেনাবাহিনীর কাছে মৌখিক অভিযোগ আসে। পরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে।”
এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।