কিশোরগঞ্জের ভৈরবে পূর্বশত্রুতার জেরে
দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রতিপক্ষের বল্লমের আঘাতে মিজান মিয়া (৩৮)নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন আরও অন্তত ৩০ জন। শ্রীনগর ইউনিয়নে ভবানীপুর ও সুলাইমানপুর দুই গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষ চলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ভৈরব উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক সুজন।
শুক্রবার (১৮ই এপ্রিল) দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, দুই দিন আগে সংগঠিত একটা ঝগড়ার মিমাংসা জন্য এক সালিশি ডাকা হয়। যেখানে তর্ক থেকে ঘটনা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
খবর পেয়ে দ্রুত ভৈরব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। নিহত মিজান ভবানীপুর সোলাইমানপুর মইদর মুন্সিবাড়ির মৃত রবিউল্লাহ মিয়ার ছেলে।
ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মেহেদী জানান, হাসপাতালে এ পর্যন্ত আমরা ১৫ জনকে চিকিৎসা দিয়েছি। এর মধ্যে গুরুতর আহত অপু মিয়া ও দুধ মিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পাপ্পু মিয়াকে কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
আহত আরও ১৫ থেকে ২০ জন মামলার ভয়ে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বলে জানান ডা. মেহেদী।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বংশগত আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে চার যুগ ধরেই উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের মৌটুপি গ্রামের দুই বংশ কর্তা বাড়ি ও সরকার বাড়ির দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। বংশ পরম্পরায় এই সংঘর্ষ কখনো শিথিল হলেও মাঝে মাঝেই হামলা-পালটা হামলা চলতে থাকে। এসব ঘটনা মামলা হয় এবং জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও উভয়পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, আজকের সংঘর্ষে সরকার বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সরকার শেফায়াত উল্লাহ এবং কর্তা বাড়ির পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপির নেতা তোফাজ্জল হোসেন।
দুই বংশের ধারাবাহিক সংঘর্ষ হামলায় এ পর্যন্ত ১৪ জন নিহত হয়েছে।
এর আগে, গতবছরে ২ জন নিহতের ঘটনায় করা মামলায় গত ১৫ এপ্রিল উভয় পক্ষের লোকজন জামিনে বাড়ি আসে। এ দিনই দুপুরে আবারও মৌটুপি গ্রামে দেশীয় অস্ত্র, টেটা,বল্লম নিয়ে ধান ক্ষেতের মাঠে সংঘর্ষে জড়ায়। ধাপে ধাপে সংঘর্ষ চলতে থাকে।
এ সময় যোগ দেয় ভবানীপুর গ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের লোকজন।
এ নিয়েই শুক্রবার সকালে সালিশ বসে। সেই সালশেই আবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নিহতের মামাত ভাই জামাল মিয়া জানায়, আগের সংঘর্ষের ঘটনাটি মিমাংসার জন্য আজ সকালে ভাবানীপুর গ্রামের নেতৃবৃন্দের সহায়তার মীমাংসা চলছিল। হঠাৎ-ই গ্রামের দুই পক্ষের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমার ফুফাত ভাই মিজানকে বুদুর বংশের লোকজন বল্লম দিয়ে আঘাত করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যায়। নিহত মিজান তিন সন্তানের জনক। পেশায় তিনি ডেকোরেশন কর্মী ছিলেন। আমরা এ হত্যার বিচার চাই।
এ বিষয়ে ভৈরব অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুয়ানি বলেন, মৌটুপী গ্রামের বংশীয় দ্বন্দ্বে আজ ভবানীপুর গ্রামে এসে লাগে। এতে বল্লমের আঘাতে মিজান নামে ১ জন নিহত হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।