ইয়েমেনের উপকূলীয় শহর হুদায়দার ওপর মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলার জবাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হুথি বিদ্রোহীরা। শুক্রবার তারা ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবের উপকণ্ঠে একটি সামরিক ঘাঁটির দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়।
ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, ইরানি প্রযুক্তিনির্ভর ‘জুলফিকার’ নামের একটি অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই হামলা চালানো হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল বেনগুরিয়ন বিমানবন্দরের পাশের একটি সামরিক স্থাপনা। এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা মেহের।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানগুলো ইয়েমেনের হুদায়দার বেশ কয়েকটি বন্দরকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত ৭৪ জন নিহত এবং আরও ১৭১ জন আহত হয়। এরপরই হুথি গোষ্ঠী জানায়, তারা একটি সমন্বিত সামরিক অভিযানে নামছে।
সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি আরও দাবি করেন, তাদের এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি বিমানবাহী রণতরী—ইউএসএস ট্রুম্যান এবং ইউএসএস ভিনসন—লক্ষ্য করে আঘাত হানা হয়েছে। একই সময় ইয়েমেনি বাহিনী সানা প্রদেশের আকাশে উড়তে থাকা একটি মার্কিন এমকিউ-৯ ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করার কথাও জানায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব হামলার মধ্য দিয়ে ইয়েমেন তাদের সামরিক সক্ষমতা এবং প্রতিরোধের বার্তা স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিচ্ছে। বিশেষ করে, ইরানঘনিষ্ঠ হুথি গোষ্ঠীর এই সামরিক তৎপরতা মধ্যপ্রাচ্যের বিদ্যমান শক্তির ভারসাম্যে নতুন মোড় আনতে পারে।
ইসরায়েলের দিকে ছোড়া জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্রটি কেবল সামরিক নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে গিয়ে আঘাত হানে, যা ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা বলয়ের দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে। বেনগুরিয়ন বিমানবন্দর অঞ্চলে হামলা হওয়ায় একে প্রতীকী বার্তাও মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
ইসরায়েল এখনো এই হামলা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে যদি ক্ষেপণাস্ত্রটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে থাকে, তাহলে তা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য নতুন ধরনের হুমকির ইঙ্গিত দেয়।
ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের ছায়া ক্রমেই গভীর হচ্ছে। এখন ইয়েমেন হয়ে সেই দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। হুথি গোষ্ঠী স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ার করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন অব্যাহত রাখে, তবে পাল্টা আঘাত আরও জোরালো হবে।
এই উত্তেজনার ফলে শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক আলোচনাও জটিল হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, ইরান ও ইয়েমেনের মধ্যকার এই নতুন উত্তপ্ত পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক অনিশ্চয়তার বার্তা দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে, তেলআবিবের দিকে ছোড়া জুলফিকার ক্ষেপণাস্ত্র শুধু একদেশের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া নয়। এটি গোটা বিশ্বের জন্য একটি বার্তা—যেখানে কথার মাধ্যমে শান্তি না এলে, আকাশপথে আসে বিস্ফোরণ।