নাটোরের গুরুদাসপুরে শিধুলী হাটের দানের টাকার ভাগ না দেওয়ায় একটি কওমি মাদরাসার পরিচালনা কমিটির ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দায়েরের অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। বর্তমানে অভিযুক্তরা কারাগারে রয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের পরিবার ও স্থানীয়রা বলছেন, নাটোর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাটোর-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল আজিজ ওই হাট থেকে প্রাপ্ত দানের অর্ধেক টাকা চেয়ে প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব না মানায় প্রতিশোধ নিতে মাদরাসা কমিটির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মামলা দায়ের করা হয়।
শুক্রবার সকালে শিধুলী, চলনালী ও পোয়ালশুড়া হযরত ওসমান (রা.) হাফেজিয়া ও কওমি মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলা হয়।
লিখিত বক্তব্যে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, “এই মাদরাসা পরিচালিত হয় সাধারণ মানুষের শ্রম আর দানে। হাটের ব্যবসায়ীরাও সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেন। সেই দানের টাকায় নজর পড়ে আব্দুল আজিজের। আমার স্বামীকে বারবার টাকার ভাগ দিতে বলেন। রাজি না হওয়ায় ছাত্রদল নেতা রুবেল হাসানকে দিয়ে মিথ্যা মামলা করান।”
তিনি জানান, মঙ্গলবার ওই মামলায় তার স্বামীসহ কমিটির ৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
মাদরাসা কমিটির সদস্য হযরত আলী ফকির বলেন, “গত ২৭ রমজান মাদরাসার অফিস কক্ষে আব্দুল আজিজ এসে হাটের দানের টাকার অর্ধেক চান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তার ছেলে সোহাগ এবং ছাত্রদল সভাপতি রুবেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমরা এতে রাজি হইনি। এরপরই মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়।”
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবিতে এলাকাবাসী, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, হেফাজতে ইসলাম, ওলামা পরিষদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, বুধবার এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে গুরুদাসপুর থানার সামনে প্রতিবাদ সভা করেন স্থানীয়রা। সভায় বক্তারা মামলাকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আখ্যা দেন।
মাদরাসার মহতামিম মো. ফাতিহুল কবীর বলেন, “হাটের পাইকাররা মাদরাসার ওজনে পণ্য বিক্রি করে সামান্য হাদিয়া দেন। এই টাকাই বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ নিজের জন্য চাইছেন। রাজি না হওয়ায় প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের কমিটির সম্মানিত লোকজনকে তুলে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “যৌথ বাহিনী মাদরাসায় এসে ৮ জনকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে প্রচার করা হয়, তারা চাঁদা তুলছিলেন। অথচ কিছুই এমন হয়নি। এটা পরিকল্পিত অপপ্রচার।”
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন— কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, হাজী মকবুল হোসেন, শরিফুল ইসলাম, লিটন হোসেন, রিপন আলী, বদিবর রহমান ও মওদুদ আহম্মেদ মনি।
অন্যদিকে, মামলার বাদী ছাত্রদল নেতা রুবেল হাসান বলেন, “মাদরাসা কমিটির কিছু লোক রশিদ ছাপিয়ে টাকার আদান-প্রদান করছেন। তাই মামলা করেছি।”
বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ বলেন, “শিধুলী হাটের টাকা নিয়ে বিএনপি ও মাদরাসা কমিটির কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বরং, মাদরাসা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। মূলত আওয়ামী লীগের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।”
তিনি আরও দাবি করেন, “ছাত্রদল নেতা রুবেল আমার অনুসারী হলেও, এই মামলার বিষয়ে আমি কিছু জানি না।”