বাংলাদেশি ফুটবলার হিসেবে মাঠে নামার পর হামজা দেওয়ান চৌধুরীর দিকেই নজর দেশের ফুটবল প্রেমিদের। তাই মঙ্গলবার রাতে টার্ফ মুরে বার্নলির কাছে ২-১ গোলে শেফিল্ড ইউনাইটেডের হার কিছুটা ভগ্নহৃদয়ে মেনে নিতে হয়েছে। শেফিল্ডকে এখন পড়তে হবে কঠিন প্লে-অফ পরীক্ষায়। তবে ম্যাচের ফলাফলের চেয়েও বেশি আলোচনায় এখন ম্যাচ শেষে ঘটে যাওয়া বর্ণবাদী আচারণ নিয়ে।
রেফারি যখন ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজালেন ঠিক সাথে সাথেই মাঠে ঢুকে পড়েন উত্তেজিত বার্নলি সমর্থকেরা। মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। হঠাৎ করে মাঠে ঢুকে পড়া সমর্থকদের ভিড়ে পড়ে যান খেলোয়াড়, রেফারি, এমনকি নিরাপত্তাকর্মীরাও। শেফিল্ড ইউনাইটেডের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী সরাসরি শিকার হন সেই চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির। এক বা একাধিক সমর্থকের সঙ্গে প্রথমে তার বাকবিতণ্ডা হয়, যা দ্রুত রূপ নেয় ধাক্কাধাক্কিতে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, এক পর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য হামজাকে ধাক্কা দেন, এবং পরে নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে টেনে ধরে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। পরে জানা যায়, হামজা চৌধুরীকে বর্ণবাদমূলক গালিগালাজও করা হয় সেই সময়। ঘটনাটি ঘিরে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে ক্লাব ও সমর্থক মহলে।
ম্যাচ-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে শেফিল্ড ইউনাইটেডের ম্যানেজার ক্রিস ওয়াইল্ডার বলেন,
“আমাদের বলা হয়েছিল মাঠে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকবে, কিন্তু সেটা ছিল না। এটা ছিল একেবারে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা। ৪০-৫০ জন মানুষ যখন আপনার দিকে দৌড়ে আসে, তখন সেটা শুধুই উদযাপন নয়; সেটা হুমকিও হতে পারে। আমাদের খেলোয়াড়দের সুরক্ষা দেওয়া উচিত ছিল।”
প্রিমিয়ার লিগে উঠার ব্যর্থতা এবং মাঠে নিরাপত্তা ঘাটতির ঘটনা মিলিয়ে এখন শেফিল্ড ইউনাইটেড যেন এক মনস্তাত্ত্বিক চাপে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের মনোবল ধরে রাখা যেমন কঠিন, তেমনি সামনে প্লে-অফের জন্য মানসিক ও কৌশলগতভাবে প্রস্তুত হওয়াটাও এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
ম্যাচে বার্নলির হয়ে জোশ ব্রাউনহিল জোড়া গোল করেন—একটি রিবাউন্ড থেকে, অন্যটি পেনাল্টি থেকে। শেফিল্ডের হয়ে টম ক্যানন একটি গোল শোধ করলেও শেষ মুহূর্তে সমতা ফেরানো যায়নি। এই হারে শেফিল্ডকে এখন নির্ভর করতে হবে পরবর্তী দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ওপর—একটি স্টোক সিটির মাঠে, অন্যটি ঘরের মাঠে ব্ল্যাকবার্নের বিপক্ষে। এই দুটি ম্যাচেই নির্ধারিত হবে তারা প্লে-অফে কতটা সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে নামতে পারবে।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) এবং প্রিমিয়ার লিগ কর্তৃপক্ষকেও সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্ব যে শুধুই ক্লাবের নয়, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
হামজার এমন বিব্রতকর অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কী বার্তা দেয় ইংলিশ ক্লাব ফুটবলে, সেই অপেক্ষাতেই যেন ফুটবল প্রেমিরা।