গাজা উপত্যকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে নতুন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় বসেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর। এই প্রস্তাবে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি বন্দি বিনিময় ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে।
একজন ফিলিস্তিনি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাব অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ হবে পাঁচ থেকে সাত বছর। এই সময়ের মধ্যে গাজা থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল। একইসঙ্গে হামাসের হাতে থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মির বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হবে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের। অর্থাৎ এটি হবে একটি পূর্ণ যুদ্ধ সমাপ্তির রূপরেখা।
এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল মিসরের রাজধানী কায়রো সফরে যাচ্ছে। দলের নেতৃত্বে থাকবেন হামাসের রাজনৈতিক পরিষদের প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ এবং প্রধান আলোচক খলিল আল-হায়া। যদিও প্রস্তাবটি নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
এর আগে, ১৯ জানুয়ারি গাজায় এক সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছিল, কিন্তু ১৮ মার্চ থেকে আবার নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। চলমান সংকটের মধ্যেই ইসরায়েল সম্প্রতি ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় হামাসকে। তবে ওই প্রস্তাবে হামাস সম্মতি দেয়নি, কারণ সেখানে হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।
এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবিও হামাসকে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, গাজার মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলায় একটি শান্তিচুক্তি জরুরি। তিনি আরও বলেন, জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে হলে চুক্তি এখন অপরিহার্য।
এদিকে, জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি হুঁশিয়ার করেছেন, গাজা বর্তমানে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। খাবার, পানি, জ্বালানি, ওষুধ—সব কিছুরই তীব্র সংকট। সীমান্তে সহায়তা নিয়ে হাজার হাজার ট্রাক অপেক্ষায় থাকলেও, সেগুলোর প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছে না ইসরায়েল।
তিনি বলেন, গাজার ২০ লাখ মানুষ যেন সম্মিলিতভাবে শাস্তি পাচ্ছেন। মানবিক সহায়তাকে এক ধরনের কূটনৈতিক ও সামরিক চাপের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হয়েছে।
এই শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যেও হামলা বন্ধ হয়নি। মঙ্গলবার ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রাণ গেছে অন্তত ২৫ জনের। নিহতদের মধ্যে ৯ জন খান ইউনিসে, ৯ জন জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে, পাঁচজন আল-শাতি শিবিরে এবং দুজন নিহত হয়েছেন রাফায়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও এক লাখের বেশি, আর অনেকেই এখনও নিখোঁজ। সূত্র: বিবিসি