আগস্টের ৪ তারিখ, আন্দোলনে উত্তাল পুরো দেশ। চারদিকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের পেটুয়াবাহিনী অনবরত চালিয়ে যাচ্ছিলো আক্রমণ, হামলা, গুলি। সেই উত্তাল সময়ে ফেনীর মহিপাল এলাকা দখলে রেখেছিলো বিপ্লবী ছাত্র-জনতা। সেই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলো ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মধুপুরের তরুণ সায়েদুল ইসলাম সাকিব।
এদিন সকাল থেকেই ফেনীতে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছিলো আওয়ামী বাহিনী। তবুও রাজপথ ছাড়েনি সাকিবের মতো বিপ্লবীরা। বিকেল গড়াতেই মুহুর্মুহু গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী। যেই গোলাগুলিতে ১১ টি তাজা প্রাণ মুহূর্তেই ঝরে যায়, আর আহত হয় সাকিবের মতো শত শত তরুণ। সাকিবের বাম চোখে গুলি লাগায় মারাত্মক জখম হয়।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমিকভাবে তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তবুও কোনো চিকিৎসা এগোচ্ছিলো না। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও আশার বাণী শোনাতে পারেননি কোনো চিকিৎসক। আর শেষে তো চিরদিনের জন্যই বাম চোখ হারিয়েছে সাকিব।
দীর্ঘ আট মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরই এমন এক চোখের আলো নিভে গেলো। গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার বাম চোখ অপসারণ করা হয়।
সন্তানের যন্ত্রণার জীবন নিয়ে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে সাকিবের বাবা নুরুল আলম বলেন, ‘৪ আগস্ট সংঘর্ষের সময় সাকিব মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিল। প্রথমদিকে কোথাও ভালো চিকিৎসা পাচ্ছিলাম না। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। অর্থাভাবের কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারিনি। পরবর্তীতে সরকারি সহায়তায় তাকে ঢাকার চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখন তার বাম চোখ অপসারণ করতে হয়েছে। সে আর কোনোদিন বাম চোখে দেখতে পারবে না।’
সাকিবকে নিয়ে চিকিৎসকদের ভাষ্য, তার বাম চোখের জখম এতটাই মারাত্মক ছিল যে, অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও তা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
সায়েদুল ইসলাম সাকিবের মতো বহু জুলাই যোদ্ধা হয়তো এখনও আলো-আঁধারের এক জীবন কাটাচ্ছেন৷