জাবি প্রতিনিধি: গত ২৩ জানুয়ারি থেকে হলবন্দী জীবন কাটানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কয়েকজন কর্মিকে সাথে নিয়ে আজ হল সংলগ্ন নিচু বটতলায় আড্ডা দিচ্ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। তবে বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের শোডাউনের খবর শুনে হলের দিকে দ্রুত পিছু হটার গুঞ্জন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টিকে পালিয়ে যাওয়া বলছেন শাখা ছাত্রলীগের অনেক নেতা-কর্মী।
২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) দুপুর ৪ টার দিকে উঁচু বটতলা থেকে অর্ধশতাধিক বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী বাইক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র ও শাখা ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি বিক্ষুব্ধ অনুসারীদের দ্বারা অবাঞ্ছিত ঘোষিত হওয়ার পর হলে বন্দী ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন। গতকাল ঢাকা-১৯ আসনের সাংসদ মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সাথে সাক্ষাতে বিদ্রোহীরা থাকলেও আসেননি তিনি।
বিক্ষুদ্ধদের হুমকি ও নিজ হলের নেতা-কর্মীদের সমর্থন না পাওয়ায় বের হতে পারেননি তিনি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। তবে আজ গুটি কয়েক অনুসারীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিচু বটতলার দিকে শক্তি প্রদশর্নের চেষ্টা থাকলেও পরবর্তীতে বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের বাইক শোডাউনের খবর পান তিনি। পরে তাদের ধাওয়া করার গুঞ্জন শুনে দ্রুত নিজ হলের দিকে পিছু হটেন তিনি। তিনি পিছু হটলেও বিক্ষুব্ধরা বাইক শোডাউন নিয়ে তার হল সংলগ্ন চলে যান। সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণ শক্তি প্রদর্শন করে ফিরে আসলেও এসময় লিটন বা তাঁর কোনো অনুসারীকেই আশে-পাশে দেখা যায় নি। কেউ কেউ এটিকে ‘পালিয়ে যাওয়া’ বলছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা বলেন, ‘এটা তো পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু না।’
এ নিয়ে আলাদাভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি বিক্ষুব্ধদের। তবে সাংসদ সাইফুলের দেখা না করতে আসা প্রসঙ্গে তারা গতকাল বলেন, ‘আমরা তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পর তার এখানে না আসাই স্বাভাবিক। আমাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণাকে তিনি মেনে নিয়েছেন।’
এদিকে হাবিবুর রহমান লিটনের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার কল করা হলেও কোনো সাড়া প্রদান করেন নি তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে পূর্বে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জমি দখলসহ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
এর আগে গত মঙ্গলবার সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে চিন্তা না করে বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকার ‘জমি দখল’ এর মত ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকা, সংগঠনের কর্মীদের খোঁজ না রাখা, কমিটির ২ বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে সমন্বয় না করা, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতি বিকেন্দ্রীকরণ না করে নিজ হল কেন্দ্রিক চিন্তাচেতনা পোষণ করার অভিযোগে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন অনুসারীরা।
এছাড়াও লিটনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটে শিক্ষক পদে ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর চাকুরীর জন্য উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসায় বৈঠক করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানকে পাওয়া না গেলেও কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ। তিনি বলেন, আমরা এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানি না। জানানো হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।