শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

১০ লাখ গাজার বাসিন্দাকে লিবিয়ায় স্থানান্তরের পরিকল্পনা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
-বিজ্ঞাপণ-spot_img

ফিলিস্তিনের নাগরিকদের দুর্ভিষহ দিনরাত্রি যেনো কাটছেই না। অনবরত বুলেট-বোমায় প্রতিনিয়ত মৃত্যুবরণ করছে, তারপরও যেনো প্রিয় মাতৃভুমি ছাড়ছেই না গাঁজাবাসিরা। এবার গাঁজা বাসিদের নিয়ে  অন্যার্য্য-পরিকল্পনার কথা জানালেন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে ১০ লাখ গাজার বাসিন্দাদের স্থায়ীভাবে লিবিয়ায় স্থানান্তরের কথা চলছে। শনিবার (১৭ মে) যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম এনবিসি নিউজ এই পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি এবং এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে এই প্রতিবদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে এক মুখপাত্র অসত্য বলে দাবি করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই স্থানান্তরের পরিকল্পনা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর লিবিয়ায় ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিনিময়ে, যুক্তরাষ্ট্রে এক দশকেরও বেশি সময় আগে জব্দ করা বিলিয়ন ডলার ফেরত দিবে ট্রাম্প প্রশাসন। তবে লিবিয়ার সঙ্গে এখনো কোনও চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো হয়নি। এছাড়া এই আলোচনা সম্পর্কে ইসরায়েলকে জানানো হয়েছে।

এই তথ্য অসত্য দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, মাঠের পরিস্থিতি এমন পরিকল্পনার পক্ষে অযোগ্য। এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করা হয়নি এবং এর কোনও অর্থ হয় না। এছাড়া এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার আগে পররাষ্ট্র দপ্তর এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনও জবাব দেয়নি। 

এদিকে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বাসেম নাইম জানান, গাজা নিয়ন্ত্রণকারী স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস গাজার বাসিন্দাদের লিবিয়ায় স্থানান্তরের বিষয়ে কোনও আলোচনা সম্পর্কে অবগত না।

তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তারা শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে। তাদের মাতৃভূমি, পরিবার এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। ফিলিস্তিনিরাই একমাত্র গাজা এবং গাজার বাসিন্দাদের জন্য কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়- এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে।

অন্যদিকে ইসরায়েলি সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। 

লিবিয়ায় প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে প্রায় ১৪ বছর ধরে অস্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক দলাদলিতে জর্জরিত রয়েছে। দেশটির পশ্চিমে আব্দুল হামিদ দ্বেইবাহ নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং পূর্বে খলিফা হাফতারের নেতৃত্বে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে।

দেশটির দবেইবাহ সরকারের মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। হাফতারের লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলে তারা জবাব দেয়নি।

গাজার কতজন ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছায় লিবিয়ায় যেতে রাজি হবেন, তা সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত প্রশ্ন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ফিলিস্তিনিদের আর্থিক প্রণোদনা যেমন- বিনা মূল্যে আবাসন এমনকি বৃত্তি দেওয়ার কথা আলোচনা করেছেন বলে সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে এই স্থানান্তরের পরিকল্পনা কখন বা কীভাবে বাস্তবায়িত হতে পারে তা অস্পষ্ট।

তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, ১০ লাখ মানুষকে সেখানে পুনর্বাসনের চেষ্টায় সম্ভবত উল্লেখযোগ্য বাধা আসবে। এই প্রচেষ্টা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এর খরচ বহন করবে তা-ও স্পষ্ট নয়। অতীতে প্রশাসন বলেছিল, আরব দেশগুলো যুদ্ধের পর গাজা পুনর্গঠনে সহায়তা করবে, তবে তারা ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে স্থানান্তরে ট্রাম্পের ধারণার সমালোচনা করেছে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসন লিবিয়াকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত কিছু অভিবাসীকে পাঠানোর স্থান হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এ মাসে এক ফেডারেল বিচারক লিবিয়ায় অভিবাসীদের পাঠানোর ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন।

আশঙ্কার বিষয় হলো, ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় স্থানান্তর করা হলে তা ভঙ্গুর দেশটির ওপর আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, লিবিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ৭৩ লাখ ৬০ হাজার। আর্থিক দিক বিবেচনায়, জনসংখ্যার দিক থেকে লিবিয়ার ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ গ্রহণ করা যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ গ্রহণের সমান হবে।

ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ার ঠিক কোথায় পুনর্বাসিত করা হবে তা নির্ধারণ করা হয়নি বলে সাবেক এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তারা তাদের আবাসনের বিকল্পগুলো খতিয়ে দেখছেন এবং গাজা থেকে লিবিয়ায় তাদের পরিবহনের প্রতিটি সম্ভাব্য পদ্ধতি- আকাশ, স্থল ও সমুদ্রপথ- বিবেচনা করা হচ্ছে বলে এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিদের একজন জানিয়েছেন। এই পদ্ধতিগুলোর সব কটিই জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুলও হবে।

এই পরিকল্পনা ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ-পরবর্তী ‘গাজা দৃষ্টিভঙ্গির’ একটি অংশ। তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজার ‘মালিকানা’ নিয়ে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ হিসেবে গড়ে তুলবে। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, ‘আমরা সেই অংশ দখল করব, এটি উন্নত করব এবং হাজার হাজার চাকরি সৃষ্টি করব এবং এটি এমন একটা কিছু হবে, যা নিয়ে পুরো মধ্যপ্রাচ্য গর্ব করতে পারবে।’

গাজা পুনর্গঠনে নিজের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ট্রাম্প বলেছেন, সেখানকার ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে অন্য কোথাও পুনর্বাসিত করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি এখন গাজায় থাকতে পারবেন না এবং আমি মনে করি আমাদের অন্য একটি জায়গার প্রয়োজন। আমি মনে করি এটি এমন একটি জায়গা হওয়া উচিত, যা মানুষকে খুশি করবে।’

ট্রাম্প ‘একটি সুন্দর এলাকা খুঁজে বের করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, যেখানে মানুষকে স্থায়ীভাবে সুন্দর বাড়িতে পুনর্বাসিত করা যায় এবং যেখানে তারা সুখী হতে পারে এবং গুলিবিদ্ধ না হয়, নিহত না হয়, গাজায় যা ঘটছে তেমন ছুরিকাহত না হয়।’ তিনি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি না মানুষের গাজায় ফিরে যাওয়া উচিত।’

গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর না করে গাজা পুনর্গঠনে মিসরের একটি প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের লিবিয়া নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা এমন সময়ে এল, যখন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক কিছুটা তিক্ত হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের জন্য কেবল লিবিয়া নয়, বরং একাধিক স্থান বিবেচনা করেছে। এক ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আলোচনা সম্পর্কে পরিচিত এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা এবং এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিদের একজন এ তথ্য জানিয়েছেন। এক সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ও আলোচনায় সরাসরি যুক্ত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর নতুন নেতৃত্বের অধীনে থাকা সিরিয়াও গাজায় থাকা ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের জন্য সম্ভাব্য স্থান হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন সিরিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। ট্রাম্প মঙ্গলবার ঘোষণা করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে এবং গত বুধবার দেশটির নতুন নেতা আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেছেন।

শেয়ার করুন

সর্বশেষ নিউজ

হাঁটু গেড়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের সরকার প্রধান একদেশ থেকে অন্য দেশে সফর করলে তাকে অভ্যর্থনা জানায় সফররত দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর এই অভ্যর্থনার ধরন যদি...

ঝালকাঠিতে কয়লা তৈরির ২৩ চুল্লি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অপরাধে ২৩টি চুল্লি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় চুল্লির ম্যানেজারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৬...

বন্দি বিনিময় সমঝোতায় পৌঁছাল রাশিয়া-ইউক্রেন

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলেও বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ‍উভয় দেশই ২ হাজার যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে। এ বন্দিদের মধ্যে...

আছিয়া হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩

মাগুরার শিশু আছিয়া হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। রায়ে অভিযুক্ত হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া খালাস পেয়েছেন বাকি ৩ আসামি। শনিবার (১৭ মে)...

সম্পর্কিত নিউজ

হাঁটু গেড়ে ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের সরকার প্রধান একদেশ থেকে অন্য দেশে সফর করলে তাকে...

ঝালকাঠিতে কয়লা তৈরির ২৩ চুল্লি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত

ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অপরাধে ২৩টি চুল্লি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ...

বন্দি বিনিময় সমঝোতায় পৌঁছাল রাশিয়া-ইউক্রেন

যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলেও বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। ‍উভয় দেশই...