অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না। বরং দেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর প্রক্রিয়া সফল করতে তার নেতৃত্বে সরকারের কার্যকারিতা আরও দৃঢ় এবং সুসংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শুক্রবার (২৩ মে) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ এই তথ্য জানিয়েছেন।
একাধিক রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক সংকটময় মুহূর্তে ড. ইউনূসের নেতৃত্ব প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতা বা পদ তার প্রয়োজন না হলেও, দেশের শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে তার উপস্থিতি অনিবার্য বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। ক্যাবিনেটের কার্যক্রমে গতি আনতে হবে এবং অগ্রগতির দৃশ্যমান চিত্র জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের সম্মতিতে গঠিত এই সরকারকে জনগণের আস্থা অর্জনে অবশ্যই ফলপ্রসূ প্রমাণ করতে হবে।
বিশ্বদরবারে ড. ইউনূসের সম্মানজনক অবস্থানকে সম্মান জানিয়ে এক নেতা বলেন, ‘তার মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যখন দেশের নেতৃত্বে আছেন, তখন সেটি বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। এই মর্যাদা ও আস্থাকে ধরে রাখাই আমাদের দায়িত্ব।’
রাজনৈতিক সংলাপ ও অন্তর্ভুক্তিমূলকতা অপরিহার্য
সূত্রের মতে, রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসানে সরকারকে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। দলগুলোকে দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
বিচ্ছিন্নতা ও একচেটিয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণকে অগ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, সমন্বিত ও সহমতভিত্তিক রাজনৈতিক পথরেখা নির্ধারণে অংশীদারিত্বমূলক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।
সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে সতর্কতা
সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধানের জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। এই বিষয়ে মত প্রকাশ করে একটি রাজনৈতিক পক্ষ জানায়, আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে কোনো সভ্য দেশের সেনাবাহিনী সরাসরি রাজনৈতিক সময়সীমা নির্ধারণ করে না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সম্মানজনক প্রতিষ্ঠান এবং তাদের উচিত তাদের সাংবিধানিক পরিধির মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করা।
তবে তারা এও বলেন, সেনাবাহিনীকে প্রাপ্য সম্মান ও আস্থা প্রদর্শন জরুরি। কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নয়, বরং ভারসাম্যপূর্ণ ও বিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপই হতে হবে মূলনীতি।
নির্বাচন ও বিচারপ্রক্রিয়া
উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সকল প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যেই একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। এই সময়ের মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ অনুসারে সকল যৌক্তিক সংস্কার সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
তারা আরও জানান, ২০২৫ সালের জুলাই-আগস্টে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’-এর প্রথম বার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপন করা হবে। পাশাপাশি, ‘স্বৈরশাসনের অবসান’ ও ‘দায়ীদের বিচার’—এই দুটি লক্ষ্য পূরণের পথে অগ্রগতি আশা করছেন তারা। আগস্টের মধ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলার প্রথম রায় প্রকাশিত হতে পারে বলেও ধারণা ব্যক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেন, ইনশাআল্লাহ, আমরা হারবো না। জনগণের শক্তি আমাদের পক্ষে, তাই আমাদের হারানো সম্ভব নয়।