দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই নতুন করে আলোচনায় এসেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সম্প্রতি তার পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উদ্বেগে পড়েছেন বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা। অনেকেই বলছেন, ড. ইউনূস যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তারা আবারও রেমিট্যান্স শাটডাউন বা বৈধ পথে টাকা পাঠানো বন্ধের পদক্ষেপ নিতে পারেন।
এর আগে, গত বছরের জুলাই মাসে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সময়ও একইভাবে রেমিট্যান্স বন্ধ করেছিলেন প্রবাসীরা। এর প্রভাব পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ওই সময় মাত্র ১০ দিনের রেমিট্যান্স শাটডাউনে বৈধ পথে প্রবাসী আয় কমে দাঁড়িয়েছিল ১.৯৫ বিলিয়ন ডলারে। তবে সরকারের পরিবর্তনের পর আবারও বাড়তে শুরু করে রেমিট্যান্স। মার্চ মাসে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
প্রবাসীদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, ড. ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা আস্থা ফিরে পেয়েছেন। তিনি শুধু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নয়, প্রবাসীদের স্বার্থেও একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। এর মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের জন্য দুটি ওয়েটিং লাউঞ্জ চালু অন্যতম। এছাড়া আরব আমিরাতে গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসী আন্দোলনকারীদের মুক্ত করতেও ভূমিকা রাখেন তিনি।
প্রবাসীদের মতে, ড. ইউনূস এখন কেবল একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদই নন, বরং একজন বিশ্বাসযোগ্য নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তারা চান, আগামী নির্বাচন তার নেতৃত্বেই হোক।
প্রবাসী সংগঠনের নেতারা বলছেন, ড. ইউনূস সরে গেলে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। বিশেষ করে যারা তার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় বসবাসরত অনেক বাংলাদেশিই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রেমিট্যান্স শাটডাউনের ডাক দিচ্ছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত এক প্রবাসী বলেন, ড. ইউনূস চলে গেলে আমরা আর বৈধ পথে টাকা পাঠাবো না। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, তিনি না থাকলে দেশে আবার পুরনো অবস্থা ফিরে আসবে।
অস্ট্রেলিয়ার আরেকজন বলেন, ৯৫ শতাংশ প্রবাসী ইউনূসকে সমর্থন করে। তার বিকল্প নেই। তার মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির জন্য রক্তসঞ্চালনের মতো। এটা বন্ধ হলে রিজার্ভে বড় ধাক্কা লাগবে। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষক এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন, এই সংকটকালে জাতীয় ঐক্য দরকার। রেমিট্যান্স বন্ধ হলে অর্থনীতি ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। আজ সন্ধ্যায় বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা রয়েছে সরকারপ্রধানের। তবে প্রবাসীরা পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছেন—ড. ইউনূসকে সরে যেতে দেওয়া যাবে না।