ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরাম উপজেলায় বিজিবির বাধায় খাল খনন না করেই পিছু হটেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।
গত বুধবার দিবাগত রাতে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া সীমান্ত পিলার ঘেঁষে থাকা সীমান্ত লাইট বন্ধ করে অন্ধকারে শূন্যরেখায় খাল খনন ও রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করে বিএসএফ।
স্থানীয়দের বরাতে বিষয়টি জানতে পেরে বিজিবি বৃহস্পতিবার সকালে বিএসএফের কাজটি বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, বুধবার দিবাগত রাতে সীমান্তের শূন্যরেখায় লাগানো ভারতীয় অংশে সড়ক বাতি বন্ধ করে দেয় বিএসএফ। এরপর কয়েকটি স্কেভেটর নিয়ে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া সীমান্ত পিলার ঘেঁষে টিলার মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ ও খাল খনন শুরু করে তারা। বিষয়টি বিজিবি টের পাওয়ার আগেই ভারতীয়রা নিজ কালিকাপুর থেকে পূর্ব রাঙ্গামাটিয়া পর্যন্ত প্রায় দেড়শ মিটার নতুন খাল খনন কাজ শেষ করে ফেলে। সকালে বিজিবি এ কার্যক্রম বন্ধে জোর পদক্ষেপ নিলে বিএসএফ পিছু হটে।
ঘটনাস্থলের পাশে গণমাধ্যমকর্মীরা বেশ কয়েকটি মাটি কাটার যন্ত্র দেখেছেন। তবে বাংলাদেশি কেউ ঘটনাস্থলের দিকে অগ্রসর হলে বিএসএফ বিভিন্নভাবে বাধা ও ভয় দেখিয়ে পিছু হটতে বাধ্য করছেন।
ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে বিজিবি সদস্যরা টহল বৃদ্ধি করে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের দাবি, গত বছরের আগস্ট মাসে বিএসএফ কর্তৃক বল্লারমুখা এলাকায় নদী রক্ষা বাঁধ কেটে দেওয়ায় ফেনীতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বল্লারমুখা বাঁধ সংস্কার কার্যক্রমেও দফায় দফায় বাধা দেয় বিএসএফ। উভয় দেশের উচ্চপদস্থ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশ অংশে বল্লারমুখা বাঁধ নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হয়। ওই বাঁধ নির্মাণের ফলে ভারতের বিলোনীয়া অঞ্চলের পানি নামতে বাধার সৃষ্টি হবে। তাই ভারতীয় বাহিনী সরাসরি ওই পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে সেখানে খাল খনন করছে। তবে ওই খালটি খনন হলে বিলোনীয়া এলাকার পানির চাপে বাংলাদেশ অংশে বন্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলেও ধারণা করছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ৪ ব্যাটালিয়নের ফেনীস্থ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএসএফ মূলত ভারত অংশের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু করছিল। আকার ও আয়তনে সেটি খালের মতো মনে হয়নি। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে কোনো কিছু নির্মাণ না করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। পরে বিজিবি ও বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠকের পর তারা সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে।
উল্লেখ্য, গেলো বছরের জুলাই-আগস্টে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা উজানের ঢলের পানির চাপে মুহুরী নদীর তীরবর্তী পরশুরামের নিজ কালিকাপুর সীমান্তের বল্লারমুখা বেড়িবাঁধের তিনটি স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে সমগ্র ফেনী জেলা পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। ভয়াবহ সেই বন্যায় ৬৭ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে ফেনীবাসী। পরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী শূন্যরেখা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঁধ পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হলে বাধা দেয় বিএসএফ। তারপর থেকে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দফায় দফায় বৈঠকের মাধ্যমে বাঁধ পুনঃনির্মাণ চালিয়ে আসছে বাংলাদেশ।