ববি প্রতিনিধি: গত ৪ মার্চ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান অধ্যাপক ড. মো বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় পর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আর সেই শুভেচ্ছা সম্বলিত ফুলের তোড়া চারপাশে সাজিয়ে ছবি তুলেছিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি পোস্ট দিয়েছিলেন তার এক শিক্ষার্থী।
সেই পোস্টটি শেয়ার করেছিলেন উপাচার্য। তবে ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় পোস্টটি সরিয়ে নেওয়া হয়, যা নতুন করে আলোচনায় নিয়ে এসেছে ড. মো বদরুজ্জামান ভূঁইয়াকে।
ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, উপাচার্য মাঝখানে বসে আছেন। আর তার চারপাশে রয়েছে শুভেচ্ছা সম্বলিত ফুলের তোড়া। ছবিটি নিয়ে নেটিজেনরা ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন সমালোচনায়। তাদের মধ্যে রয়েছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন ফেসবুকে ববি উপাচার্যের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি রুচির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। যারা নিয়োগ দিয়েছেন তাদের রুচিরও প্রশংসা না করে পারছি না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন তার ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অনেক ফুলের মাঝে একটি তোলাপোকা।’
এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। অবস্থান পরিষ্কার করেছেন উপাচার্য নিজেও।
ববি উপাচার্য অধ্যাপক বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ফুল যখন সরিয়ে ফেলা হচ্ছে তখন এক কর্মচারী বলে স্যার আপনাকে সবাই ভালোবেসে সম্মান হিসেবে এ ফুলের তোড়া দিয়েছে। এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। যদি একটি ছবি তুলে রাখতেন তাহলে আজীবন স্মৃতি হয়ে থাকতো। তার কথায় আমিও তখন একটি ছবি তুলি। কিন্তু এটা এভাবে ভাইরাল করে মানুষ সমালোচনা করবে তা কখনো ভাবিনি। আর এটা তো আমি পোস্ট দেই নি। আমাকে নানা জায়গা নানা সময়ে মানুষ ফুল দেয়। সাক্ষাৎ করে। তা কখনো পোস্ট করিনি। যে যাই বলুক আমি মনে করি এটা মানুষের ভালোবাসা। আমি মানুষকে ভালোবাসি। মানুষ আমাকে ভালোবাসে।
লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ইসরাত জাহান তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এক পোস্টে লিখেন, স্যার হঠাৎ করে এসে উপাচার্যের চেয়ারে বসেননি। তিনি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেজারারের দায়িত্ব পালন করেছেন গত ২ বছর এবং উপাচার্য হওয়ার পূর্বে স্যার রুটিন দায়িত্বে ছিলেন চার মাস। এই চার মাসে স্যারের কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে যা গত চার বছর ছিল স্থবির। সুতরাং স্যারের যে ছবি নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে সেই ছবিটাই অল্প বয়সে স্যারের সকল অর্জনের প্রতিচ্ছবি।
তিনি বলেন, প্রতিদিন তিনি নতুন চমক দিয়ে যাচ্ছেন।স্যারের ৪ বছরের জন্য ভিসি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় সবাই অনেক আনন্দিত। স্যার অত্যন্ত শিক্ষার্থীবান্ধব এবং কাজের প্রতি একনিষ্ঠ, তাই সকল বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ে ফুল দিয়েছেন। এটা সবার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার বহিঃপ্রকাশ। স্যারের ছবি নিয়ে যারা ট্রল করছে তাদের প্রতি নিন্দা জানাচ্ছি। কারণ এতে করে আমার কর্মস্থলেরও সম্মানহানি ঘটছে।
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু জাফর মিয়া বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া স্যার একজন ডাইনামিক, দায়িত্বশীল ও কর্তব্যনিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, দপ্তর ও সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্যারকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত যে কাউকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোটাই বাঙালির সংস্কৃতির অংশ।
উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের পূর্বে স্যার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসেবেও প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং চার মাস উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী স্যারের কাজে অত্যন্ত সন্তুষ্ট ও আনন্দিত। ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে স্যারের প্রতি সকলের ভালোবাসা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ফুল দেওয়ার ছবি নিয়ে যারা ট্রল করছেন তারা নিন্দনীয় কাজ করছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বরং যে ছবি নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে সেটি স্যারের সকল অর্জনেরই প্রতিচ্ছবি।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার হিসাবে ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল যোগদান করেন৷ এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জনপ্রিয় কলামিস্ট এবং টকশো ব্যক্তিত্ব হিসেবেও সারাদেশে পরিচিত।