প্রযুক্তি সাধারণত শহরকেন্দ্রিক চর্চার বিষয় হিসেবে পরিচিত। তবে সীমান্তঘেঁষা ছোট জেলা চুয়াডাঙ্গার একদল তরুণ প্রমাণ করেছে- সফলতার জন্য জায়গা নয়, দরকার সাহস, নিষ্ঠা আর স্বপ্নের প্রতি অটল বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসের জোরেই তারা পৌঁছে গেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী অঙ্গনে।
“Together we build, together we rise” এই মূলমন্ত্র ধারণ করে পথচলা শুরু করা চুয়াডাঙ্গা সায়েন্স অ্যান্ড রোবোটিকস ক্লাব এখন জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের প্রযুক্তিনির্ভর তরুণ উদ্যোগগুলোর অন্যতম হয়ে উঠেছে।
ক্লাবটি এরই মধ্যে অর্জন করেছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য: ইসমাইল-আল আজারি সায়েন্স ফেস্ট ২০২৫-এ প্রথম রানারআপ, ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা ও প্রযুক্তি সপ্তাহ (জেলা পর্যায়)-এ প্রথম স্থান, এবং WICE ২০২৫ (বাংলাদেশ জাতীয় রাউন্ড)-এ তিনটি রৌপ্য পদক, তিনটি ব্রোঞ্জ পদক ও একটি বিশেষ পুরস্কার।
ক্লাবটির কার্যক্রম জুড়ে রয়েছে- রোবোটিকস, সেন্সরনির্ভর স্মার্ট সল্যুশন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, রিমোট নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-নির্ভর প্রকল্প।
জানা গেছে, এই উদ্যোগের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছেন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মো. জাহিদ হাসান জিহাদ। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নিজ খরচে ক্লাব পরিচালনা করে আসছেন। যন্ত্রাংশ কেনা থেকে শুরু করে যাতায়াত ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ- সবকিছুতে তাঁর আত্মত্যাগই আজকের এই অবস্থানের মূল চালিকাশক্তি।
ক্লাবের টিমওয়ার্কও চোখে পড়ার মতো। রোবোটিক ডিজাইন: মুসবিতুল ইসলাম সিফাত, কাঠামো নির্মাণ: আব্দুল করিম, প্রোগ্রামিং: মেহেরাব হোসাইন, ইলেকট্রনিক্স ও মডেলিং: মো. সিফাত, উপস্থাপন ও ডকুমেন্টেশন: মো. নাসিম বিশ্বাস, পরিকল্পনা: সাব্বির রহমান এবং মিডিয়া কাভারেজ: মো. হাসিবুল হাসান।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার তরুণ লেখক ও গবেষক মাসুদ রানা সাগর (শেখ সাগর) ফেস দ্যা পিপলকে বলেন, অপরচুনিটির সাগরে ডুবে যারা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে, তারা আর যারা শত সংকট মোকাবিলা করে বিজয়ী হয় তারা কখনোই এক নয়।
তিনি বলেন, রাজধানী থেকে বহু দূরে, দেশের একেবারে প্রান্তিক অঞ্চলের এই ছেলেগুলো তাদের চিন্তাভাবনা, সাহস ও কর্মক্ষমতার মাধ্যমে রাজধানীর তরুণদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে চলার সক্ষমতা প্রমাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমি জানি, চুয়াডাঙ্গাবাসী হয়তো এখনই তাদের ব্যাপারে খুব একটা সচেতন নয়। সম্ভবত এই মুহূর্তে হবেও না। কারণ, তারা জেলার চলমান সময়ের তুলনায় অনেক বছর এগিয়ে আছে। এখন না হলেও, ভবিষ্যতে প্রজন্মের একটি বড় অংশ তাদের দেখানো পথেই চলবে, ইনশাআল্লাহ।
মাসুদ রানা বলেন, আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না তাদের ভেতরে কী পরিমাণ সম্ভাবনা ও শক্তি লুকিয়ে আছে। তারা আমাদের জেলার তরুণ প্রজন্মকে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তারুণ্যের পথে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে।
তিনি জানান, এই ক্লাব শুধু একটি জেলার নয়, বরং একটি জাতীয় সম্পদ হওয়ার মতো সম্ভাবনা রাখে। প্রয়োজন শুধু যথাযথ সহায়তা ও স্বীকৃতি।