দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এক নতুন প্রেক্ষাপটে হাজির হয়েছে এবারের ঈদুল আজহা। পরিবর্তনের হাওয়ায় দেশের মতোই বদলে গেছে শিক্ষাঙ্গনের আবহও। এই বিশেষ সময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কী বার্তা দিচ্ছেন ক্যাম্পাসের ছাত্রনেতারা—তা জানতেই কথা বলেছি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “স্বৈরাচার শাসনের অবসানের পর এটাই প্রথম কুরবানির ঈদ। এই ঈদে ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে সকল সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কল্যাণের উদ্দেশ্য কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করছি। নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ যেন আবার গেড়ে বসতে না পারে সেজন্য শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।”
ইবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শিক্ষার্থী বান্ধব একটি ছাত্র সংগঠন। শিক্ষার্থীদের সার্বিক কল্যাণ কামনায় আমরা বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ভিন্ন মতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। বছর ঘুরে ঈদুল আযহা সন্নিকটে। ত্যাগের মহান শিক্ষা ও নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার অনন্য উপলক্ষ পবিত্র ঈদ। এই ঈদে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহত সহ বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে হতাহত সকল পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান রইল। আসুন সকলে মিলে ঈদ আনন্দ উপভোগ করি। ঈদ মোবারক।”
ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদ আনন্দ, উৎসব আর খুশির বার্তা নিয়ে আসে, যা আমাদের শান্তি, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ শেখায়। এই দিনে আমরা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হই। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের জীবনেই ঈদ আনন্দের বার্তা বয়ে আনে, মানুষ পেছনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে ভালোবাসায় সিক্ত হয়।তবে গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনে ঈদের খুশি তেমনভাবে ধরা দেয় না। পরিবারের মুখে আহার তুলে দিতে ঈদের দিনেও তাদের অনেককে হয়তো কাজ করতে হয়। পথশিশু বা অভাবী পরিবারের সদস্যদের ঈদের নতুন জামা কেনার সামর্থ্যও থাকে না। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ যেন সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে, সেদিকে আমাদের সকলের নজর রাখা উচিত। সর্বোপরি ইবি পরিবারের সকলকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইবি সংসদের পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী ফ্যাসিস্ট রেজিম মুক্ত বাংলাদেশে ঈদুল আজহা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্লোগান দিবে এবং শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজকে এক পতাকার নিচে সমবেত করবে বলে আমি আশাবাদী। ক্যাম্পাস ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের মধ্যে ঈদ এক ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের বিমূর্ত প্রতীক হয়ে উঠুক এমন প্রত্যাশা রইলো!”
বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিস ইবি শাখার সভাপতি সাদেক আহমেদ বলেন, “ধনি গরীব সকল ভেদাভেদ ভুলে তাকওয়ার শিক্ষায় সাম্যের গান গেয়ে সকলে উদযাপন করি লালরক্তের ঈদ আনন্দ। মহা আনন্দের এই দিনে আমরা স্মরণ করছি দেশ বিদেশের সকল নিপীড়িত জনতাকে। মাগফিরাত কামনা করছি, জুলুমের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে শাহাদাত বরণ কারী সকল বীর যোদ্ধার তরে। আসুন আমরা সকলে মিলে ঐক্যের গান গেয়ে একটি ভ্রাতৃত্বময় সমাজ গড়ে তুলি। নতুন বাংলাদেশ হোক আমাদের সকলের। ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক প্রতিটি বাংলাদেশীর ঘরে। ঈদ মোবারক।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “ঈদুল আজহা আমাদের কাছে শুধু একটি উৎসব নয়, এটি আত্মত্যাগ, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের এক মহান শিক্ষা। আমি প্রত্যাশা করি, এই পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে আমরা যেন ত্যাগের মহিমাকে ধারণ করে এক সুন্দর, ইনসাফপূর্ণ ও কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে পারি।ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির সব সময়ই শিক্ষার্থীদের পাশে আছে এবং থাকবে। ঈদের এই আনন্দ যেন কোনো শিক্ষার্থীর জীবন থেকে দূরে না থাকে, সেজন্য আমরা আমাদের সাধ্যমতো উদ্যোগ নিয়েছি। এই ঈদের দিনে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা যেন একে অপরের সাথে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি, সেই প্রত্যাশা রাখছি।আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলের কোরবানি কবুল করুন, সকল ভালো কাজকে কবুল করুন এবং আমাদের সকলকে তাঁর রহমত ও বরকত দান করুন। সকলের প্রতি ঈদুল আজহার আন্তরিক শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক!”