ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য নতুন সময় ঘোষণা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন পক্ষের চাপের মধ্যে আগের ঘোষণা থেকে কিছুটা এগিয়ে এনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে তিনি বলেছেন, “বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন সংক্রান্ত চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করে আমি আজ দেশবাসীর কাছে ঘোষণা করছি যে আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যে কোনো একটি দিনে অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন উপযুক্ত সময়ে আপনাদের কাছে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রদান করবে।”
তিনি বলেন, “আমরা যারা এই নির্বাচনে ভোটার হব তারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এবং সৌভাগ্যবতী। আমরা একটা অনন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের সুযোগ ও দায়িত্ব পাচ্ছি। আমরা জাতির নতুন যাত্রাপথ তৈরি করে দেয়ার দায়িত্ব পাচ্ছি।”’
আমরা নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি সৃষ্টির মহান সুযোগটা পাচ্ছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের সুচিন্তিত ভোটের মাধ্যমেই নতুন বাংলাদেশ নির্মিত হবে। শহীদদের রক্তদান সার্থক হবে।আশা করি, বিষয়টা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেই সবাই ভোটকেন্দ্রে যাব এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে ভোট দেব। এখন থেকে ভাবনা চিন্তা শুরু করুন। আলোচনা শুরু করুন। এখন থেকে আপনাদের ভোটের গুরুত্বটা বুঝে নিন। আপনার এবারের ভোটের গুরুত্ব ঐতিহাসিক মানদণ্ডে দেখা হবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুস্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত অগাস্টে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
গত কয়েক মাসে সরকারের গঠিত সংস্কার কমিশনগুলো যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার ভিত্তিতে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে ঐকমত্য কমিশন। এই কমিশনেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস।
তিনি বলে আসছিলেন, নির্বাচন কবে হবে তা নির্ভর করবে সংস্কার কতটা করা হবে তার ওপর। গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার সেরে ডিসেম্বরেই নির্বাচন সম্ভব। আর আরো কিছু সংস্কার করলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ভোট করা যাবে। তবে নির্বাচন জুনের পরে যাবে না, সেটাও তিনি বলেছেন।
কিন্তু বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি হুমকি দিয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে এরপর সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে।
অন্যদিকে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের গড়া দল এনসিপি বলে আসছিল আওয়ামী লীগের বিচার এবং সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন তারা চায় না।
এর মধ্যে মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডোর’, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার গুঞ্জন এবং জাতীয় নির্বাচনের দাবি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ইউনূসের ‘পদত্যাগের অভিপ্রায়’ ঘিরে মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রাজনৈতিক সঙ্কটের উদ্ভব হয়।
সেই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে দুই ডজন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে দলগুলো ইউনূস সরকারকে সমর্থনের কথা জানালেও যার যার দাবিতে অটল থাকে। তবে ওই আলোচনার পর উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়।
শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে বন্দর, করিডোর, নির্বাচনসহ বিতর্কের প্রায় প্রতিটা বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন ইউনূস।