কুষ্টিয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও নতুন করে আতঙ্ক ছড়াতে শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে আগত কোভিড পজিটিভ রোগীদের হঠাৎ উপস্থিতি এবং কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।
গত সপ্তাহে রাজধানী থেকে আগত দুজন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে আসেন। কিন্তু ভর্তি না হয়ে চিকিৎসা না নিয়েই চলে যাওয়ার ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা—এই অবহেলার কারণে সংক্রমণ আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। একইসঙ্গে জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠান্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে প্রতিদিনই নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন, যা করোনা সংক্রমণের পূর্বাভাস দিচ্ছে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা।
১৩ জুন শুক্রবার বেলা ১২ টার দিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ড পরিদর্শন করে দেখা যায়, ২৫ জনেরও বেশি নারী-পুরুষ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সরা নিয়মিতভাবে রোগীদের মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, পরিস্থিতি এখনই ভয়াবহ নয়, তবে স্বাস্থ্য খাতে সতর্কতা ও প্রস্তুতি বজায় রাখা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রেখেছে এবং সম্ভাব্য রোগীর জন্য চিকিৎসাসেবা দিতে সবধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির মাঝেই জনমনে আরও উদ্বেগ ছড়িয়েছে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা। জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার জন্য চালু হওয়া এই ল্যাবটি সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। ল্যাবটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা দুজন কর্মচারীর অবহেলায় গত চার মাস ধরে ধীরে ধীরে ল্যাবের সব যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে গেছে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “চুরির ঘটনাটি এক দিনের নয়। আমাদের ধারণা, গত চার মাস ধরে ধাপে ধাপে এই চুরি হয়েছে। আমরা এক মাস আগে তা বুঝতে পারি এবং দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “ল্যাবের দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের চরম অবহেলা রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা সংক্রমণে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৮৫৫ জন, আর আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪ হাজার মানুষ। কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাস ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ, যেখানে এক মাসেই ৩৪২ জনের মৃত্যু হয়। শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন সংকটসহ নানা জটিলতায় অনেক রোগী মারা গেছেন হাসপাতালেই।
করোনার এমন অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামোর দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক অবহেলা জনস্বাস্থ্যকে আরও হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এখনই প্রয়োজন নতুন করে সতর্কতা, নজরদারি এবং স্বাস্থ্যখাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।