ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের নবম দিন চলছে। ইসরায়েলের হামলার মুখে পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে ইরান। চলছে যুদ্ধ। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আতঙ্কে দিশেহারা ইসরায়েলিরা যুদ্ধের সময়টায় আশ্রয় নিয়েছে ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্র—বাঙ্কারে। তবে এসব বাঙ্কারে অবস্থানরতদের অনেকের আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তার খোঁজে বাঙ্কারে ঢুকলেও সেখানে আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা ও মানসিক চাপে তারা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তারা ‘গর্তে’ বসে উন্মাদ আচরণ করছেন।
গত ১৩ জুন মধ্যরাতে ইসরায়েলের চালানো আগ্রাসী হামলার জবাবে তেহরান একাধিক পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর পর থেকে ইসরায়েলজুড়ে আকাশপথে হামলার সতর্কতা হিসেবে দিনে-রাতে বারবার সাইরেন বাজছে। ফলে জনসাধারণ ছুটে যাচ্ছেন ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে। কেউ কেউ বারবার এই পালিয়ে যাওয়ার ভোগান্তি এড়াতে রাতেও বাঙ্কারে কাটাচ্ছেন।
বিবিসি, আল–জাজিরা এবং স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, বাঙ্কারগুলোতে ধারণক্ষমতার বেশি মানুষ অবস্থান করায় সেখানে ভেতরে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বহু জায়গায় মানুষ চিৎকার করছেন, হঠাৎ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন, কেউ কেউ বেহুঁশ হয়ে পড়ছেন—এই চিত্র উঠে এসেছে মোবাইল ফোনে ধারণ করা ভিডিওতে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, কিছু বাঙ্কারের ছাদ ধসে পড়েছে, ধুলায় আচ্ছন্ন মানুষজন দিগ্বিদিক ছুটছেন। আতঙ্কিত জনতা ‘সব শেষ’ বলে চিৎকার করছেন। তেল আবিব ও হাইফা এলাকার কিছু বাঙ্কারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো।
ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, বেসামরিক নাগরিকদের দখলিকৃত অঞ্চল (ইসরায়েল) ত্যাগ করা উচিত। তাদের ভাষায়, “বাংকারগুলো আপনাদের রক্ষা করতে পারবে—এমন আশায় থাকবেন না।”
রোববার ইরানি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রেজা সাইয়াদ বলেন, “দখলিকৃত অঞ্চল ছেড়ে যান এবং নিজেদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ দেবেন না।”
ইরান এখন পর্যন্ত প্রায় ১০০টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে বলে জানালেও, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দাবি, এই সংখ্যা ৩৫০-এর বেশি। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন না।
ইরান দাবি করেছে, ইসরায়েল আগ্রাসনের শুরুতেই তাদের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাসহ আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালায়। এতে ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন এবং বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানিও ঘটে। এরই প্রতিশোধ হিসেবে ইরান তেল আবিব, হাইফা ও ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।
হাইফা শহরে টানা হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন। শহরের তেল পরিশোধনাগার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ‘নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে’ তেল আবিবের বাসিন্দাদের এলাকা ত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ইরান।
বাঙ্কারে অবস্থান করা নাগরিকরাও পুরোপুরি নিরাপদ নন এমনটা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর হোম ফ্রন্ট কমান্ড। তিনি বলেন, অনেক বাঙ্কার ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর দিনের পর দিন সেই পরিবেশে অবস্থান করায় মানুষের মানসিক ভারসাম্যে চরম প্রভাব পড়ছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাঙ্কারে অবস্থানরতদের সহায়তায় জরুরি ভিত্তিতে মানসিক স্বাস্থ্য টিম কাজ করছে। তবু আতঙ্ক, বিশৃঙ্খলা আর নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে অসংখ্য ইসরায়েলি এখন তাদের বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় করছেন উন্মাদ আচারণ।