এনামুল হোসেন, ববি প্রতিনিধি: চলতি বছরের গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) তিনটি হল থেকে ভেঙে ফেলা হয় শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ফলক।
দাবি উঠে তিনটি হলসহ ববির শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নাম পরিবর্তনের। কিন্তু নতুন উপাচার্য নিয়োগের এক মাস পার হলেও কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। বরং আবাসিক হলগুলো ও লাইব্রেরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তিতে এখনও ব্যবহার চলছে আগের সেই নাম। প্রশাসনের এই কচ্ছপ গতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করেছে অসন্তোষের। যদিও বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মতামত।
শিক্ষার্থীরা জানায়, নতুন উপাচার্য যোগদানের একমাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারেননি। নতুন বাংলাদেশে উপাচার্য কেমন বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দিবেন তা এখনও ধোঁয়াশায়।
শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফা জামান লিজা বলেন, শেখ হাসিনা হলের নাম অপসারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন কোনো নাম দেওয়া হয়নি। এজন্য বর্তমানে আমাদের হলটি নামহীন হল হয়ে রয়েছে। এতসময় অতিবাহিত হওয়ার পরও এখনও নতুন নাম দেওয়া হয়নি। আশা রাখবো, হলটি অতিদ্রুত নামবিহীন নতুন কোনো নাম পাবে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ঈশিতা তাসনিম বলেন, ভিসি ম্যাম হল পরিদর্শনে আসেন এবং শিক্ষার্থীরা কিছু দাবি উত্থাপন করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম পরিবর্তন। নাম পরিবর্তন এবং নতুন নামকরণ এর দাবি উপস্থাপন করা হলেও এখনও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যা প্রশাসনের গুরুত্বহীনতা এবং উদাসীনতার পরিচয় দেয়। আমরা চাই যতদ্রুত সম্ভব এই হলের নাম পরিবর্তন করে বরিশালের কোন প্রখ্যাতিসম্পন্ন নারীর নামে হলের নামকরণ করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ববি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের নাম যে হল ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছে সে নামগুলো এখনও পরিবর্তন না হওয়ার পেছনের ব্যর্থতা প্রশাসনের। প্রশাসনের ধীরগতি ও কার্যক্রমের দুর্বলতার পরিচয় এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। তাদের কার্যক্রম দ্রুত হলে, এ নামগুলো এখনো থাকতে পারতো না।
আরেক সমন্বয়ক শাহেদুল ইসলাম শাহেদ বলেন, আমাদের ২২ দফা দাবির মধ্যে হলসহ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নাম পরিবর্তনের দাবি ছিল। শীঘ্রই আমরা শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রশাসনের কাছে এ দাবিগুলো নিয়ে যাবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, হলগুলো ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির নতুন নামকরণের বিষয়টি উপাচার্য একটি সিন্ডিকেট সভা রাখবেন সেখানেই এবিষয়ে সিধান্ত নেওয়া হবে।
হলের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানির অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছি, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে। আমি জুলাই’২৪ কে ধারণ করি, লালন করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কারোর নামে যদি কোনো হল অথবা আরো কিছু থাকে তবে সেগুলো অবশ্যই পরিবর্তন করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, আগের নামগুলো অপসারণ করা হয়েছে। নাম পরিবর্তনের বিষয়গুলো একটি প্রক্রিয়ার ব্যাপার, প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।