নারায়ণগঞ্জে বৈদ্যুতিক তার চোরাই কারবারির ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা আতাউর রহমান মুকুলকে উলঙ্গ করে পেটায় বিএনপির আরেক গ্রুপ ডন বজলু বাহিনী। রোববার (২৯ জুন) বন্দর উপজেলার হরিপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, সকালে বন্দরের হরিপুর ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জেলা মটর চালক লীগের সভাপতি আলাউদ্দিনের পক্ষে ঠিকাদারি কাজ চালু করতে ঘটনাস্থলে যান মুকুল। এছাড়াও রোববার (২৯ জুন) মদনপুরে হরিপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে টেন্ডার (দরপত্র) দাখিলের শিডিউলও ছিল।
সব মিলিয়ে এ সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি বজলুর রহমান ওরফে ডন বজলুর নেতৃত্বে মুকুলের উপর হামলা চালানো হয়। এসময় মুকুলকে বিবস্ত্র করে পেটানো হয় এবং হেনস্তা করা হয়। এসময় তার পড়নে থাকা পাঞ্জাবি ও পায়জামা ছিঁড়ে ফেলে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মুকুলকে উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানান, হরিপুর পাওয়ার প্লান্টের মধ্যে স্ক্রাবের বৈদ্যুতিক তারের ভেতরে তামার মোটা অংশ চোরাই কারবারির মাধ্যমে বিক্রি করার পেশী শক্তিকে মূল কেন্দ্র করেই এ ঘটনার সুত্রপাত। এই তামার তার অনেকটাই মূল্যবান। জানা যায়, বৈদ্যুতিক তার থেকে কয়েকশ কেজি তামার মোটা অংশ সরিয়ে নিতে পারলে চোরাই মার্কেটে এই তামা উচ্চ দামে বিক্রি করা যায়।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী জানান, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুকুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এঘটনায় এখনও কোন মামলা দায়ের করা হয়নি, মামলা হলে আমরা পদক্ষেপ নেবো।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের আমলে স্থানীয় এমপি সেলিম ওসমানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল মুকুলের। বিএনপির রাজনীতি করলেও সেসময় বন্দরে ওসমান পরিবারের আদেশ, নির্দেশই পালন করতেন মুকুল। বিভিন্ন সময় সেলিম ওসমানের সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে দেখা যেত মুকুলকে। সেলিম ওসমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর অভিযোগও রয়েছে মুকুলের বিরুদ্ধে।
সর্বশেষ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে ২০২৩ সালে মুকুলকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পদ কাকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে ডন বজলুর ইতিহাসও খুবই দীর্ঘ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন এলাকাবাসী জানান, অনেকের মুখে শোনা যায় তিনি কাচপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার ত্রাশের রাজত্বের কাহিনী শুনলে বাচ্চারাও ভয় পান। মায়েরা তার দুষ্ট সন্তানদের ডন বজলু আসছে এমন ভয় দেখিয়ে রাতে ঘুম পাড়াতো। ডন বজলু কাচপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচনও করেছিলেন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে এই বৈদ্যুতিক কেন্দ্র থেকে তার সরিয়ে নিতেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বন্দর, মদনপুর, কাচপুরের লোভী নেতাদের চোখ পড়ে সেই তামার তারের উপর।